ভূমিকা:
আমরা এমন এক যুগে বাস করছি, যেখানে মানুষের হাতে AI প্রযুক্তি, মহাকাশযান আর জ্যোতির্বিজ্ঞান রয়েছে—কিন্তু চিন্তায় এখনো আটকে আছি হাজার বছরের পুরোনো ধর্মীয় ভুলের মধ্যে। ধর্মগ্রন্থগুলোতে যে সব বৈজ্ঞানিক ভুল রয়েছে, তা যদি প্রশ্নহীনভাবে মানা হয়, তাহলে সমাজ কখনোই মুক্ত ও প্রগতিশীল হতে পারবে না।
ধর্মীয় গ্রন্থে উল্লেখিত কিছু সুস্পষ্ট বৈজ্ঞানিক ভুল:
১. সূর্য অস্ত যায় কাদাযুক্ত ঝর্ণায়
“সে পৌঁছল সূর্যাস্তের স্থানে; সেখানে সে সূর্যকে অস্ত যেতে দেখল একটি কাদাযুক্ত ঝর্ণায়।”
— সূরা আল-কাহফ 18/86
বিজ্ঞান কী বলে?
সূর্য আসলে কখনো ‘অস্ত’ যায় না। এটি একটি স্থির তারকা (Star), আর আমাদের ‘অস্ত যাওয়া’ দেখাটা পৃথিবীর ঘূর্ণনের কারণে দৃশ্যগত। সূর্যের ব্যাস প্রায় ১৩ লাখ কিমি, এবং এটি পৃথিবী থেকে ১৫ কোটি কিমি দূরে অবস্থিত।
বৈজ্ঞানিক রেফারেন্স:
NASA: Solar System Exploration – Sun ar System Exploration – Sun
European Southern Observatory: Why does the Sun set?
২. নক্ষত্র দিয়ে শয়তান তাড়ানো হয়
“আমি নিকটবর্তী আকাশকে প্রদীপমালার দ্বারা সুশোভিত করেছি এবং শয়তানদের আক্রমণ প্রতিরোধে ছুড়ে দেই।”
— সূরা আল-মুলক 67/5
বিজ্ঞান কী বলে?
নক্ষত্র হলো বিশাল হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম গ্যাসীয় গোলক, যেগুলো নিউক্লিয়ার ফিউশনের মাধ্যমে আলো ও তাপ উৎপন্ন করে। এগুলোর সঙ্গে ‘শয়তান তাড়ানো’ বা উদ্দেশ্য করে কিছু ছুঁড়ে মারা কোনোভাবেই যুক্ত নয়। উল্কাপিণ্ড বা শুটিং স্টার আসলে নক্ষত্র নয়।
বৈজ্ঞানিক রেফারেন্স:
NASA: What Is a Star?
৩. মানুষ সৃষ্টি হয়েছে রক্তের দলা থেকে
“তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন জমাট রক্ত থেকে।”
— সূরা আলাক 96/2
বিজ্ঞান কী বলে?
মানব ভ্রূণ কখনোই "জমাট রক্ত" নয়। মানব ভ্রূণ একদম শুরুতে সেল বিভাজনের মাধ্যমে গঠিত হয়—blastocyst নামে এক বিশেষ কোষগুচ্ছের মাধ্যমে। গর্ভাবস্থায় রক্ত তৈরি হয় কয়েক সপ্তাহ পর হেমাটোপোয়েটিক অঙ্গগুলোতে (যেমন ইয়ক স্যাক, যকৃত)।
বৈজ্ঞানিক রেফারেন্স:
Human Embryology and Developmental Biology, Moore & Persaud
National Library of Medicine: Human embryonic development stages
৪. পৃথিবী সমতল ও স্থির
“আল্লাহ পৃথিবীকে বিছানা করেছেন এবং পাহাড় স্থাপন করেছেন তার উপরে যেন নড়ে না।”
বিজ্ঞান কী বলে?
পৃথিবী একটি প্রায় গোলাকার (oblate spheroid) বস্তু, যা নিজের অক্ষের উপর ঘূর্ণায়মান। এর গতি প্রায় ঘণ্টায় ১৬৭0 কিমি। পাহাড় স্থির রাখার জন্য কোনো কাঠামো নয়, বরং টেকটনিক প্লেটের সংঘর্ষে সৃষ্টি।
বৈজ্ঞানিক রেফারেন্স:
USGS: Plate Tectonics
NASA: Earth Fact Sheet
ভুলগুলো তুলে ধরা কেন জরুরি?
শিক্ষার মান উন্নত করতে
যদি শিশুরা ছোটবেলা থেকেই “সূর্য কাদার ঝর্ণায় অস্ত যায়” শিখে, তাহলে তারা বিজ্ঞানকে বিশ্বাস করবে কিভাবে?
চিন্তার স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে
যেখানে প্রশ্ন নিষিদ্ধ, সেখানে জ্ঞান থেমে যায়।
বিজ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়তে
যে সমাজ প্রমাণ-ভিত্তিক সিদ্ধান্ত নেয়, সেই সমাজই উন্নত ও মানবিক হয়।
আমরা কী করতে পারি?
ধর্মগ্রন্থগুলোর বিজ্ঞানবিরোধী দাবিগুলো সংগ্রহ করে জনসমক্ষে উপস্থাপন করুন।
প্রতিটি দাবির বিপরীতে স্পষ্ট বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিন।
মানুষের মধ্যে সন্দেহের বীজ বপন করুন—সত্য জানার তীব্র আগ্রহ তৈরি করুন।
যে ধর্ম প্রশ্ন সহ্য করতে পারে না, সে ধর্ম মানুষের নয়—ভয়ের।”
— আবু হুরাইরা (রাঃ)
বিজ্ঞানই সেই আলো, যা ধর্মের মিথ্যা দাবিগুলোর মুখোশ খুলে দেয়।
আজ সময় এসেছে “আল্লাহ জানেন” টাইপের বক্তব্যকে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার।