ইসলামে সমকামিতা: বিধান, শাস্তি ও ফিকাহসূত্রে বিশ্লেষণ



 ভূমিকা


সমকামিতা (Homosexuality) আধুনিক যুগে এক সামাজিক ও নৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে দাঁড়ালেও ইসলাম এই বিষয়ে প্রাচীনকাল থেকেই সুস্পষ্ট অবস্থান নিয়েছে। ইসলামী শারিয়াহ সমকামিতা—বিশেষত পুরুষ সমকামিতা (লিওয়াত)—কে হারাম ও গর্হিত অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করেছে, এবং এর জন্য শাস্তির বিধান রেখেছে।


---


## 📖 কুরআনের দৃষ্টিতে সমকামিতা


কুরআনে লুত (আ.)-এর কওমের কাহিনী সবচেয়ে সুপরিচিত সমকামী সম্প্রদায়ের উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করেছিলেন এই পাপাচারের কারণে।

চালুন ভিডিও থেকে দেখি





### ❝তোমরা তো নারীদের ছেড়ে পুরুষদের কাছে কামাচ্ছ? বরং তোমরা সীমালঙ্ঘনকারী এক কওম।❞


— *সূরা আ’রাফ ৭:৮১*


### ❝অবশেষে আমি তাদের উপর এক প্রচণ্ড প্রস্তর বৃষ্টি পাঠালাম।❞


— *সূরা হুদ ১১:৮২*


উপরোক্ত আয়াতগুলোতে "পুরুষের প্রতি যৌন আকর্ষণ" বা "লিওয়াত" কে জঘন্য অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।


---


## 📚 হাদীসে সমকামিতার শাস্তি


নবী মুহাম্মদ (সা.) এই বিষয়ে কঠোর হুশিয়ারি দিয়েছেন। নিম্নোক্ত হাদীসগুলি বিশেষভাবে লক্ষণীয়:

ইসলামে সমকামীতার শাস্তি কি তা মিজানুর রহমান আজহারীর মুখ থেকে শুনে নিন 




### 🔹 **“যে ব্যক্তি যে ব্যক্তি পুরুষের সঙ্গে স্ত্রীর মতো যৌনমিলন করে, তাদের উভয়কেই হত্যা করো।”**


— *আবু দাউদ: ৪৪৬২, তিরমিজি: ১৪৫৬* (সনদে মতভেদ আছে তবে অধিকাংশ ফিকাহবিদ গ্রহণ করেছেন)


### 🔹 **“আল্লাহ এমন জাতিকে অভিশপ্ত করেছেন যারা লুতের কাজ করে।”**


— *তিরমিজি: ১৪৫৭*


---


## ⚖️ ইসলামী শরিয়াহতে শাস্তির ধরন


ফিকাহবিদদের মধ্যে মতভেদ থাকলেও অধিকাংশ মাযহাবের অভিমত নিম্নরূপ:


### ◾ হানাফি মাযহাব:


সমকামিতা **হাদদ অপরাধ নয়**, বরং **তাঅযীর শাস্তিযোগ্য অপরাধ**। শাস্তির ধরন বিচারকের বিবেচনায় হবে—কারাদণ্ড, প্রকাশ্য অপমান বা শাস্তিমূলক শারীরিক শাস্তি।


### ◾ মালিকি, শাফেয়ি ও হাম্বলি মাযহাব:


যদি কোনো পুরুষ অপর পুরুষের সাথে স্ত্রীর মতো সহবাস করে, **তবে উভয়কেই পাথর মেরে হত্যা করা উচিত** (যদি তারা বিবাহিত হয়)। অবিবাহিত হলে **প্রহার ও নির্বাসনের শাস্তি**।


### ◾ প্রাচীন ইসলামি রাষ্ট্রে বাস্তবায়ন:


উমর (রা.) ও আলী (রা.)-এর আমলে কিছু ক্ষেত্রে সমকামীদের উপর সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যকর হয়েছিল বলে ফিকাহ গ্রন্থে বর্ণনা আছে।


---


## 📌 আধুনিক প্রসঙ্গ ও বিতর্ক


আধুনিক সমাজে বহু মুসলিম দেশ যেমন ইরান, সৌদি আরব, মোরিতানিয়া, সুদান ইত্যাদিতে এখনো **সমকামিতাকে অপরাধ** হিসেবে গণ্য করা হয় এবং মৃত্যুদণ্ডসহ বিভিন্ন শাস্তির বিধান রয়েছে।


তবে, কিছু প্রগতিশীল ইসলামপন্থী মতবাদ এই বিষয়ে পুনর্ব্যাখ্যা করতে চায়—তাদের যুক্তি, লুতের কওমের উপর আসা শাস্তি শুধুমাত্র ধর্ষণ ও জুলুমের জন্য ছিল। তবে মূলধারার উলেমা ও ফিকাহবিদেরা এ দাবিকে গুরুত্ব দেন না।


---


## 🔖 সূত্রসমূহ:


1. কুরআন মাজিদ: সূরা আ’রাফ ৭:৮১, হুদ ১১:৮২, শুআরা ২৬:১৬৫-১৭৩

2. হাদীস: আবু দাউদ ৪৪৬২, তিরমিজি ১৪৫৬, ইবনে মাজাহ ২৫৬১

3. আল-মাওসূআ আল-ফিকহিয়া (Kuwait), খণ্ড: ৩৫, পৃষ্ঠা: ৩২০

4. আল-হিদায়া (হানাফি ফিকাহ), খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৫৪৫

5. Dr. Yusuf al-Qaradawi, *The Lawful and the Prohibited in Islam*

6. *Human Rights Watch Report*: “We’re Here and We’re Queer”: Gay and Lesbian Muslims in the Islamic World (2008)


---


## উপসংহার


ইসলামে সমকামিতা কোনো সামাজিক ‘পছন্দ’ নয়, বরং এটি একটি নিষিদ্ধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে নির্ধারিত। এর পক্ষে থাকা মানে কুরআন-সুন্নাহ ও ফিকাহের শতাব্দীপ্রাচীন ঐক্যমতের বিরুদ্ধাচরণ করা।


এই প্রবন্ধের উদ্দেশ্য হলো শুধুমাত্র ইসলামি উৎস থেকে নির্ভরযোগ্য ব্যাখ্যা তুলে ধরা—কাউকে অপমান করা নয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন