সূরাটি শুরু হয় এমনভাবে:
"তাব্বত ইয়াদা আবি লাহাবিওওয়াতাব্ব..."
অর্থাৎ: "ধ্বংস হোক আবু লাহাবের দুই হাত এবং সেও ধ্বংস হয়ে গেছে।"
সত্যি বলতে, আবু লাহাব তো ১৪০০ বছর আগেই মারা গেছে। তার শাস্তিও, যদি সত্যিই কেউ বিশ্বাস করে, 'তবে পরকালে' সে নাকি ভোগ করবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো—আজকের দিনে দাঁড়িয়ে মুমিনরা এখনও সেই সূরাটি পড়ে ‘আবু লাহাবকে ধ্বংস’ করার দোয়া করে কেন?
একজন মৃত মানুষ, যার হাড্ডিগুলোও এখন ধুলো হয়ে গেছে, তাকে আজও অভিশাপ দিয়ে লাভ কী? এটা কি শুধুই ধর্মীয় আবেগ? নাকি এর পেছনে আছে বুদ্ধিবৃত্তির চরম অপচয়?
অন্ধ বিশ্বাসের ভয়াবহতা
ধর্মান্ধদের অনেকেই মনে করেন, সূরা লাহাব পড়লে ‘নাস্তিকরা ধ্বংস’ হয়ে যাবে, বা ‘মুসলিমদের শত্রুরা নিঃশেষ হয়ে যাবে’। অথচ সূরাটি স্পষ্টভাবে নির্দিষ্ট একজন মানুষকে উদ্দেশ করে পাঠ করা হয়েছিল, যার মৃত্যু হয়েছে বহু আগেই।
এটা অনেকটা এমন—কেউ এখনো হিটলারকে গালি দিচ্ছে আশায় যে তার আত্মা ব্যথা পাবে!
যুক্তিহীনতায় ধর্মান্ধতার উল্লাস
ধর্মগ্রন্থে লেখা আছে বলে সেটিকে আজীবন প্রয়োগযোগ্য এবং চিরন্তন সত্য ধরে নেওয়াটা যদি কেবল আবেগের জায়গা হতো, তাও মেনে নেওয়া যেত। কিন্তু যখন সেই আবেগ বাস্তবতা, বিজ্ঞান, এবং যুক্তিকে উপহাস করে, তখন সেটা হয়ে ওঠে একটি সামাজিক ব্যাধি।
সূরা লাহাব পড়ার মাধ্যমে যে একজন আধুনিক মানুষ আবু লাহাবকে ধ্বংস করতে চায়—এটা প্রমাণ করে সে ইতিহাস, বাস্তবতা এবং মৃত্যুর ধারণা—এই তিনটি বিষয়েই জ্ঞানের অভাবে ভুগছে। এটা যেমন হাস্যকর, তেমনি বেদনাদায়ক।
আসলেই কি 'আবু লাহাব' ধ্বংস হয়েছে?
যদি সূরা লাহাব দ্বারা ‘আবু লাহাব ধ্বংস হয়েছে’ এমন দাবিই সত্যি হয়, তাহলে কি নাস্তিকদের বিরুদ্ধে সূরাটি এখনো "কার্যকর"? তাহলে পৃথিবীতে এত ‘অমুসলিম’ ও ‘মুহাম্মদের সমালোচক’ আজও কেন জীবিত? কেন তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহর আর কোনো “সরাসরি” আয়াত আসে না?
একজন মৃত মানুষকে অভিশাপ দেওয়া আর লাশের ওপর ঢিল ছুঁড়তে পার্থক্য খুব সামান্য। সূরা লাহাব পড়ে আবু লাহাবকে ‘ধ্বংস’ করতে চাওয়া মানে হলো—মানুষ এখনো এমন কল্পনায় বাস করছে যেখানে যুক্তি নেই, কেবল ধর্মীয় আবেগের অন্ধ স্রোত আছে।
এটা শুধু মূর্খতা নয়—এটা একধরনের মানসিক বন্দিত্ব।