ভূমিকা:
ইসলামী শরিয়া অনেকের কাছে আল্লাহর নির্ধারিত আইন, যেখানে ন্যায়বিচার, শান্তি এবং শুদ্ধতা বিরাজ করবে—এমন বিশ্বাস প্রচলিত। কিন্তু এই আইনের বাস্তবিক প্রয়োগের দিকে তাকালে দেখা যায়, এটি একটি মধ্যযুগীয় কাঠামো, যেখানে নাগরিকদের মধ্যে সমতা নেই, মানবাধিকার উপেক্ষিত, এবং রাষ্ট্র ধর্মের ভিত্তিতে নিপীড়নমূলক হয়ে ওঠে। এই পোস্টে আমরা পরপর কয়েকটি বিষয়ে আলোচনা করব, শরিয়া-শাসিত রাষ্ট্রে কী কী সমস্যা দেখা দিতে পারে—বিশেষ করে অমুসলিমদের অধিকার, নারীর অবস্থা, বাকস্বাধীনতা, শাস্তির পদ্ধতি, এবং আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থার সঙ্গে সংঘাত।
১. অমুসলিমদের অধিকার: ধর্মীয় বৈষম্যের আইনি বৈধতা
ইসলামী শরিয়ার একটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য হলো অমুসলিমদের "ধিম্মি" হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা। তারা রাষ্ট্রে বসবাস করতে পারবে, তবে কিছু শর্তে। তাদের অধিকার হবে সীমিত, এবং তাদেরকে পৃথক কর ব্যবস্থার আওতায় আনা হবে।
কোরআন ও হাদিসভিত্তিক নির্দেশনা:
-
সূরা তওবা ৯:২৯ —
“যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসে বিশ্বাস করে না, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যা হারাম করেছেন তা হারাম করে না এবং সত্য ধর্ম (ইসলাম) গ্রহণ করে না—তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর যতক্ষণ না তারা জিজিয়া দেয় নিজ হাতে, অপমানিত অবস্থায়।” -
সুনান আবু দাউদ ৩০৫৭ —
“যদি একজন ধিম্মি মুসলমানদের সমান হতে চায়, তবে তাকে অপমান করা হবে।”
এর অর্থ দাঁড়ায়:
-
অমুসলিমরা রাষ্ট্রের পূর্ণ নাগরিক না হয়ে হবে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক।
-
তাদেরকে জিজিয়া কর দিতে হবে, যেটা মুসলমানদের জন্য প্রযোজ্য নয়।
-
আদালতে মুসলমানের বিরুদ্ধে তাদের সাক্ষ্যগ্রহণ অগ্রহণযোগ্য হতে পারে।
-
তারা সেনাবাহিনীতে, বিচার বিভাগে, বা রাষ্ট্রপ্রধানের পদে নিযুক্ত হতে পারবে না।
-
ইসলাম প্রচার করতে পারবে, কিন্তু নিজের ধর্ম প্রচার করতে পারবে না।
বাস্তব উদাহরণ:
-
সৌদি আরবে গির্জা বানানো নিষিদ্ধ।
-
পাকিস্তানে আহমদিয়া মুসলিমদের অমুসলিম হিসেবে ঘোষণা করে রাষ্ট্র থেকে মৌলিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
-
ইসলামী রাষ্ট্রে অনেক সময় অমুসলিমদের উপর জোর করে ইসলাম চাপানোর উদাহরণও আছে, যেমন ISIS-এর শাসনে ইয়াজিদিদের উপর সংঘটিত গণহত্যা।
সমস্যার সারমর্ম:
আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থার মূল ভিত্তি হল সমান নাগরিক অধিকার। ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত্তিতে কর আরোপ, আইনি বৈষম্য, ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ধর্মভিত্তিক শ্রেণিবিন্যাস—এই সবকিছুই একটি মানবাধিকারবিরোধী কাঠামো তৈরি করে। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে যেমন মুসলিম ও অমুসলিম সমান, শরিয়া-শাসিত রাষ্ট্রে সেটা সম্ভব নয়। শরিয়া তখন রাষ্ট্রকে ধর্মের উপনিবেশে পরিণত করে।
২. নারীর অধিকার ও শরিয়া: পবিত্রতার নামে বৈষম্য
ইসলামী শরিয়ার অধীনে নারীর অধিকার এমনভাবে নির্ধারিত যে, তা পুরুষের তুলনায় সর্বক্ষেত্রে সীমিত ও অধস্তন। এই বৈষম্য শুধু সামাজিক নয়, বরং আইনগতভাবেও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়। এর পেছনে কোরআন, হাদিস এবং চার মাযহাবের ফিকহি ব্যাখ্যাকে ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। যদিও একে 'নারীর মর্যাদা রক্ষার জন্য ব্যবস্থা' বলে দাবি করা হয়, বাস্তবে এর মাধ্যমে নারীদের সিদ্ধান্ত, স্বাধীনতা এবং মানবিক মর্যাদাকে হ্রাস করা হয়।
২.১ সাক্ষ্যে অক্ষমতা ও অর্ধেক মানবিক মর্যাদা
সূরা বাকারা ২:২৮২ —
"…আর দুই পুরুষ না পাওয়া গেলে, এক পুরুষ ও দুই নারী—যারা সাক্ষ্য গ্রহণে সন্তুষ্ট হবে—তাদের রাখা হোক। যাতে যদি একজন ভুলে যায়, তাহলে অপরজন তাকে স্মরণ করিয়ে দেয়।"
এই আয়াতটি শরিয়া আইনে নারীর সাক্ষ্যকে পুরুষের অর্ধেক মূল্যবান করে তোলে। বিশেষ করে আর্থিক ও বিচারিক ব্যাপারে নারী একা সাক্ষ্য দিতে পারবে না।
২.২ উত্তরাধিকার আইনে বৈষম্য
সূরা নিসা ৪:১১ —
"পুরুষের জন্য দুই নারীর সমান অংশ আছে।"
শরিয়ায় পিতা-মাতা, সন্তানদের মধ্যে উত্তরাধিকার বণ্টনে পুরুষ সবসময় দ্বিগুণ পায়। এটি একটি সাংবিধানিক বৈষম্য, যা নারীর অর্থনৈতিক নিরাপত্তাকে পুরুষের উপর নির্ভরশীল করে তোলে।
২.৩ বহুবিবাহ বনাম একনিষ্ঠতা
শরিয়া অনুযায়ী পুরুষ একসাথে চারটি স্ত্রী রাখতে পারে (সূরা নিসা ৪:৩), অথচ নারীর জন্য একাধিক স্বামী রাখা সম্পূর্ণ হারাম। এই দ্বৈতনীতি পুরুষতান্ত্রিক একাধিপত্যকেই বৈধতা দেয়।
২.৪ স্বামীর কর্তৃত্ব ও স্ত্রীর অনুগত্য
সুরা নিসা ৪:৩৪ —
"পুরুষেরা নারীদের উপর কর্তৃত্ব রাখে… যদি তারা অবাধ্যতা করে, তাহলে প্রথমে উপদেশ দাও, পরে বিছানা আলাদা করো, তারপর মারো।"
এই আয়াতটি শরিয়া আইন অনুযায়ী স্বামীকে স্ত্রীর ওপর প্রাধান্য ও শারীরিক শাস্তি দেওয়ার অধিকার দেয়। আজকের দুনিয়ায় যেখানে ঘরোয়া সহিংসতা একটি গুরুতর অপরাধ, সেখানে শরিয়া আইনে তা ধর্মীয় বৈধতা পায়।
২.৫ পোশাক, চলাফেরা ও স্বাধীনতার সীমাবদ্ধতা
নারীর চলাফেরা, পোশাক পরা, শিক্ষাগ্রহণ, এমনকি কাজ করার ক্ষেত্রেও শরিয়ায় কঠোর বিধিনিষেধ আছে। উদাহরণস্বরূপ:
আফগানিস্তানে তালেবানি শরিয়ার অধীনে নারী শিক্ষা নিষিদ্ধ।
ইরানে হিজাব না পরলে নারীদের গ্রেফতার ও শাস্তি দেওয়া হয়।
সৌদি আরবে (এখন কিছুটা পরিবর্তন হলেও) একসময় নারীদের গাড়ি চালানোও নিষিদ্ধ ছিল।
২.৬ নারীর ধর্মান্তর বা বিয়ে করার অধিকার
শরিয়া অনুযায়ী মুসলিম নারী কোনো অমুসলিম পুরুষকে বিয়ে করতে পারে না, কিন্তু মুসলিম পুরুষ বইলে ইহুদি ও খ্রিস্টান নারীকে বিয়ে করতে পারে। এটি নারীর উপর আরেকটি বৈষম্যমূলক নিয়ন্ত্রণ।
সারমর্ম
ইসলামী শরিয়ায় নারীকে একটি নির্ধারিত ভূমিকার মধ্যে আটকে রাখা হয়েছে—যেখানে তার স্বাধীনতা, মতামত, এবং মর্যাদা নিয়ন্ত্রিত। এই ব্যবস্থায় নারীর উপর নজরদারি, অবিশ্বাস, এবং পুরুষ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় ধর্মের নামে। আধুনিক গণতান্ত্রিক ও মানবিক মূল্যবোধের সঙ্গে এটি সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক।
৩. বাকস্বাধীনতা ও ধর্ম সমালোচনার পরিণতি: ঈমান ও মৃত্যুর দ্বন্দ্ব
ইসলামী শরিয়ার অন্যতম মূল বৈশিষ্ট্য হলো—ধর্মের সমালোচনাকে শুধু অনৈতিক নয়, অপরাধ হিসেবে গণ্য করা। শরিয়া শাসনে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা একেবারেই সীমিত, বিশেষ করে ইসলাম, মুহাম্মদ, কোরআন, সাহাবি, বা ধর্মীয় আইন নিয়ে প্রশ্ন তোলা নিষিদ্ধ। এর ফলাফল হতে পারে অপমান, সামাজিক নির্বাসন, শারীরিক শাস্তি, এমনকি মৃত্যুদণ্ড।
৩.১ ধর্মত্যাগ (অপোস্টেসি বা রিদ্দা) ও মৃত্যুদণ্ড
সহীহ বুখারী ৯:৮৩:১৭ —
“যে ব্যক্তি তার ধর্ম পরিবর্তন করে, তাকে হত্যা করো।”
এই হাদিসের ভিত্তিতে ইসলামী শরিয়ায় ধর্মত্যাগ মহাপাপ এবং একইসাথে রাজনৈতিক অপরাধ। এর শাস্তি বেশিরভাগ ফিকহে মৃত্যুদণ্ড।
এমনকি যদি কেউ ব্যক্তিগতভাবে ইসলাম ত্যাগ করে, এবং প্রকাশ্যে কিছু না বলে, তারপরও শরিয়ার চোখে সে ‘মুরতাদ’। আধুনিক আইনে এটা মত ও বিবেকের স্বাধীনতা, কিন্তু শরিয়ায় তা রাজদ্রোহ।
বাস্তব উদাহরণ:
পাকিস্তানে ব্লাসফেমি আইনের কারণে বহু নিরপরাধ মানুষ বছরের পর বছর জেলে থাকে, আদালতের রায়ের আগেই জনতা মেরে ফেলে।
বাংলাদেশে ব্লগার রাজীব হায়দার, অভিজিৎ রায়, অনন্ত বিজয়, নীলাদ্রী নীল—তাদেরকে হত্যা করা হয়েছিল "ইসলাম অবমাননার" অভিযোগে।
সৌদি আরব ও ইরানে ধর্মত্যাগের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড এখনো আইনত অনুমোদিত।
৩.২ ইসলাম, মুহাম্মদ বা কোরআনের সমালোচনা: শাস্তি অবধারিত
শরিয়ায় ‘সাক্ষাৎ নিন্দা’ (sabb al-nabi), ‘ইসলাম অবমাননা’ এবং ‘মুরতাদ ফিতরি’ ইত্যাদি ধারায় কেউ যদি প্রশ্ন তোলে:
মুহাম্মদ কি সত্যিই নবী?
কোরআনে বিজ্ঞানের ভুল আছে কিনা?
শaria আইন কি ন্যায়বিচারহীন?
তাহলে তাকে "কাফির", "মুনাফিক", "মুরতাদ" ঘোষণা করে সামাজিক ও আইনি শাস্তির মুখোমুখি করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে জনগণ নিজেই 'ফতোয়া' দিয়ে হত্যা করতে এগিয়ে আসে।
৩.৩ মতপ্রকাশের নিয়ন্ত্রণ = চিন্তার কারাগার
যেখানে মানুষ নিজের ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে না, বা বিকল্প চিন্তাধারা প্রকাশ করতে পারে না, সেখানে সত্য উদঘাটনের সুযোগ থাকে না। এটি শুধু মতপ্রকাশের অধিকার হরণ করে না, বরং একটি গোটা সমাজের চিন্তার স্বাধীনতাকে গলা টিপে মারে।
সারমর্ম
ইসলামী শরিয়ার অধীনে বাকস্বাধীনতা শুধু সীমিত নয়—প্রায় অস্তিত্বহীন। ইসলাম নিয়ে প্রশ্ন তোলা, সমালোচনা করা, কিংবা ধর্ম পরিবর্তন করা—সবই এমন অপরাধ হিসেবে বিবেচিত যার পরিণতি মৃত্যু পর্যন্ত গড়াতে পারে। ফলে এমন সমাজে জ্ঞান, বিজ্ঞান, যুক্তি ও মানবিক চেতনার বিকাশ সম্ভব হয় না। এখানে মানুষ ধর্মের নামে জীবনের সবচেয়ে মৌলিক অধিকার—ভাবার ও বলার স্বাধীনতা—হারিয়ে ফেলে।
৪. শাস্তির পদ্ধতি: মধ্যযুগীয় নিষ্ঠুরতা ও শরিয়ার ন্যায়বোধ
ইসলামী শরিয়া কেবল অপরাধ নির্ধারণ করে না, বরং নির্ধারণ করে তার শাস্তির ধরন, মাত্রা এবং প্রকাশভঙ্গি—যা মূলত শাস্তির মাধ্যমে ভয় ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি কৌশল। এসব শাস্তির পদ্ধতি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, শরিয়া বিচারব্যবস্থা আধুনিক মানবাধিকার ও আইনশাস্ত্রের মৌলিক নীতির সঙ্গে সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী।
৪.১ প্রকাশ্যে হত্যা, অঙ্গহানি ও বেত্রাঘাত
চুরি:
সূরা মায়েদা ৫:৩৮ —
“চোর পুরুষ ও চোর নারী—তাদের হাত কেটে দাও, এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের কৃতকর্মের প্রতিফল।”
ব্যভিচার:
সূরা নূর ২৪:২ —
“ব্যভিচারী নারী ও ব্যভিচারী পুরুষ—তোমরা উভয়কে একশত বেত্রাঘাত দিও।”
সহীহ বুখারী ৬৮২৯ —
“যে বিবাহিত অবস্থায় ব্যভিচার করে, তাকে পাথর মেরে হত্যা করো।”
ডাকাতি:
সূরা মায়েদা ৫:৩৩ —
“…তাদের হাত ও পা বিপরীত দিক থেকে কেটে দাও, অথবা তাদের দেশ থেকে বহিষ্কার করো।”
ধর্মত্যাগ:
সহীহ বুখারী ৫২:২৬০ —
“যে ব্যক্তি ইসলাম ত্যাগ করে, তাকে হত্যা করো।”
এইসব শাস্তি দৃশ্যত শাস্তি নয়, বরং প্রকাশ্যে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি—যার লক্ষ্য হলো সমাজে আতঙ্ক সৃষ্টি করে ‘নৈতিকতা’ বজায় রাখা।
৪.২ বিচার প্রক্রিয়ার অনুপস্থিতি
শরিয়ার অনেক শাস্তিই প্রমাণের অনুপস্থিতি বা অযৌক্তিক শর্তে নির্ধারিত হয়:
-
ব্যভিচার প্রমাণ করতে হলে চারজন মুসলমান পুরুষের সাক্ষী লাগবে। না পেলে অভিযোগকারী নিজেই শাস্তিযোগ্য।
-
ধর্ষণের শিকার নারী যদি এই চারজন সাক্ষী দিতে না পারে, তাহলে তাকেই ব্যভিচারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
-
ধর্মত্যাগ বা ব্লাসফেমির অভিযোগে "ইচ্ছা" বা "প্রেক্ষাপট" বিবেচনা না করে সরাসরি শাস্তি কার্যকর হতে পারে।
এগুলো বিচার নয়, বরং এক ধরনের আইনি সন্ত্রাস—যেখানে যুক্তি, মানবিকতা বা পুনর্বাসনের কোন স্থান নেই।
৪.৩ শিশু, নারী ও মানসিক প্রতিবন্ধীদের জন্যও রেহাই নেই
শরিয়া অনেক ক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া সত্ত্বেও শিশুদের শাস্তি দিতে অনুমোদন দেয়। আবার নারী ধর্ষণের শিকার হলেও শাস্তি পেতে পারে যদি চারজন সাক্ষী না থাকে। এমনকি মানসিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিও ‘তাওবা না করলে’ মৃত্যুদণ্ড পেতে পারে।
৪.৪ শাস্তির লক্ষ্য: শুদ্ধি না, প্রতিশোধ
আধুনিক দণ্ডবিধি (penology) যেখানে অপরাধীকে সংশোধনের মাধ্যমে পুনরায় সমাজে ফিরিয়ে আনার উপর গুরুত্ব দেয়, শরিয়ায় তার উল্টো। এখানে শাস্তির লক্ষ্য হচ্ছে—শরীর ও মনের উপর দৃষ্টান্তমূলক আঘাত হেনে সমাজে ধর্মীয় নিয়ম প্রতিষ্ঠা।
সারমর্ম
ইসলামী শরিয়ার শাস্তির ব্যবস্থা আসলে একটি ভয়ভিত্তিক নিয়ন্ত্রণ কৌশল—যেখানে মানবাধিকার, ন্যায়বিচার ও করুণা অগ্রাধিকার নয়। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে সমাজে নৈতিকতা নয়, বরং আতঙ্ক প্রতিষ্ঠিত হয়। আধুনিক বিচারব্যবস্থা যেখানে সংশোধন ও মানবিকতার ওপর দাঁড়িয়ে, সেখানে শরিয়া দাঁড়িয়ে আছে প্রতিশোধ ও শাস্তির উপর।
৫. রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে শরিয়ার প্রভাব: একনায়কতন্ত্রের ধর্মীয় মুখোশ
ইসলামী শরিয়ার যে একটি বিশেষ দিক সবচেয়ে আলোচিত কম, কিন্তু বাস্তবে সবচেয়ে বিপজ্জনক, তা হলো রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক ক্ষমতার ওপর এর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার ধারা। যখন শরিয়া কেবল ব্যক্তিগত ধর্মাচরণে সীমাবদ্ধ না থেকে রাষ্ট্রব্যবস্থার চালিকা শক্তি হয়ে ওঠে, তখন একটি ধর্মীয় অভিজাত শ্রেণি ‘আল্লাহর প্রতিনিধি’ হিসেবে সমগ্র জনগণের উপর একনায়কতান্ত্রিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে। এখানে গণতন্ত্র, জনগণের ইচ্ছা, বা মানবিক আইন—সবকিছুকে ধর্মের নামে পরাভূত করা হয়।
৫.১ সার্বভৌমত্ব আল্লাহর: জনগণ নয়
শরিয়াভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থার মূল নীতি হলো “আল্লাহই একমাত্র আইনপ্রণেতা”।
সূরা ইউসুফ ১২:৪০ —
“আইন দেওয়ার অধিকার কেবল আল্লাহর।”
এর মানে দাঁড়ায়, কোনো সংসদ, কোনো গণভোট, কোনো রাজনৈতিক দল মানুষের ইচ্ছা অনুযায়ী আইন তৈরি করতে পারে না। জনগণ এখানে আইনের উৎস নয়, বরং বাধ্য অনুগামী মাত্র।
ফলে গণতন্ত্রের ভিত্তি—“জনগণই রাষ্ট্রের মালিক”—এই ধারণা সম্পূর্ণ বাতিল হয়ে যায়।
৫.২ রাজনৈতিক বিরোধিতা = ধর্মদ্রোহিতা
শরিয়াভিত্তিক রাষ্ট্রে যে কেউ সরকারের বিরুদ্ধে মত দিলেই তাকে শুধু রাষ্ট্রবিরোধী নয়, বরং ধর্মদ্রোহী, ফাসেক, মুনাফিক, এমনকি মুরতাদ ঘোষণা করা যায়। কারণ সরকার ও ধর্ম একত্রে মিশে যায়।
এই ব্যবস্থায় রাজনৈতিক বিরোধী দমন করা হয় "আখিরাত রক্ষার" নামে। উদাহরণস্বরূপ:
-
ইরানে ধর্মীয় নেতার সমালোচনার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে।
-
সৌদি আরবে ‘সালাফি’ ব্যাখ্যার বাইরে মত দিলেই জেল বা শিরচ্ছেদ পর্যন্ত হয়েছে।
-
তালেবান আফগানিস্তানে নারীদের স্বাধীনতা চাওয়াকে 'ইসলামবিরোধী ফিতনা' হিসেবে চিহ্নিত করে।
৫.৩ ধর্মীয় শ্রেণির কর্তৃত্ব ও ফতোয়াকেন্দ্রিক রাষ্ট্র
শরিয়া চালু হলে রাজনীতির একপ্রান্তে এসে বসে ‘উলামা’ শ্রেণি।
-
তারা নির্ধারণ করে কোন আইন শরিয়াসম্মত আর কোনটা নয়।
-
তাদের ফতোয়া রাষ্ট্র আইনের চেয়েও বেশি ওজন পায়।
-
তারা বিচার ব্যবস্থার অংশ হয়ে পড়ে, ফলে বিচার হয় পক্ষপাতদুষ্ট।
ফলে একটি ধর্মীয় একনায়কতন্ত্র গঠিত হয়, যেখানে জনগণ শুধু শাসিত হয়, কিন্তু প্রশ্ন করতে পারে না।
৫.৪ সংখ্যালঘু ও ভিন্নমতের দল নিষিদ্ধ
শরিয়ার চোখে ইসলাম ছাড়া অন্য মতাদর্শ বিপজ্জনক। ফলে ধর্মনিরপেক্ষতা, বামপন্থা, নারীবাদ, সমকামিতা, দার্শনিক সংশয়বাদ বা নাস্তিকতা—সবই নিষিদ্ধ হতে বাধ্য।
এই ব্যবস্থায়:
-
সাংবাদিকতা হুমকির মুখে পড়ে।
-
শিক্ষাব্যবস্থা হয় ধর্মভিত্তিক।
-
আইনি প্রক্রিয়া হয় ধর্মীয় অনুশাসনে বাঁধা।
-
ভিন্নমতকে দেখা হয় "অপরাধ" হিসেবে।
সারমর্ম
শরিয়া-ভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা মূলত গণতন্ত্রবিরোধী একনায়কতন্ত্রের ধর্মীয় রূপ। এখানে রাষ্ট্র জনগণের নয়, আল্লাহর নামে কিছু মানুষের হাতে বন্দি থাকে। মতপ্রকাশ, ভোটাধিকার, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা, ভিন্নমত—সবকিছু ধর্মীয় আইনের চাপে নিষ্পেষিত হয়। ফলে শরিয়া কেবল ধর্ম নয়, রাজনৈতিক শাসনের একটি দমনমূলক কাঠামো হয়ে ওঠে।
৬. বর্ণবাদ ও শ্রেণিবিভাজন: মুসলমানরাও সমান নয়
ইসলামী শরিয়াকে অনেকেই "সকল মুসলমানের জন্য সমান ন্যায়" বলে দাবি করলেও, বাস্তবতায় শরিয়া নিজেই ধর্মীয় শ্রেণিবিভাজন এবং আরব-বহির্ভূত মুসলমানদের প্রতি এক ধরনের অবজ্ঞা ও বর্ণবাদকে বৈধতা দেয়। এই বৈষম্য শরিয়ার গ্রন্থ, ইতিহাস, এবং বাস্তব-জগতের ইসলামি রাষ্ট্রগুলোর ভেতরে স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।
৬.১ আরব শ্রেষ্ঠত্ব: ইসলাম কি আন্তর্জাতিক, নাকি আরব জাতীয়তাবাদ?
ইসলামের শুরু থেকেই "আরব" পরিচয়কে একটি বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। কোরআন, হাদিস, এবং ইসলামী শাসনব্যবস্থায় আরব ভাষা, আরব রীতি, এমনকি আরবদের জাতিগত পরিচয়কেও অন্যদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ধরে নেওয়া হয়েছে।
সহীহ মুসলিম ৬৫৫৩ —
“আল্লাহ এই জাতিকে (আরব) নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য নির্বাচিত করেছেন।”
যদিও ইসলামের ব্যাখ্যা করা হয় "সবার জন্য", বাস্তবে শরিয়াভিত্তিক সমাজব্যবস্থায় আরব মুসলমানরাই হয় নেতৃত্বের দাবিদার, আর অ-আরব মুসলমানরা প্রায়শঃই অনুগত প্রজার ভূমিকায়।
৬.২ জাতিগত দাসপ্রথার বৈধতা
শরিয়ায় দাসপ্রথা অনুমোদিত এবং তা জাতিগতভাবে পরিচালিত হয়েছে শতাব্দীর পর শতাব্দী। বিশেষ করে আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গরা আরব দাসবাজারে হাজার হাজার বছর ধরে বেচাকেনা হয়েছে।
-
বুখারী ৪৪৭৩: মুহাম্মদের মালিকানায় ছিল আফ্রিকান দাস ‘বিলাল’, ‘সাফিনা’ ইত্যাদি।
-
দাসদের শাস্তি ও অধিকার মুসলমানদের চেয়ে ভিন্ন ছিল; তাদের উপর যৌন-শোষণকেও হালাল করা হয়েছে (সূরা নিসা ৪:৩, ২৪)।
-
আজও সৌদি আরব ও অন্যান্য আরব দেশে দক্ষিণ এশিয় ও আফ্রিকান শ্রমিকরা দাসসুলভ অবস্থায় বাস করে, শরিয়ার নামে এই বৈষম্য টিকিয়ে রাখা হয়েছে।
৬.৩ মাজহাব ও সম্প্রদায়ভিত্তিক বৈষম্য
শরিয়া মুসলমানদের মধ্যেই বিভাজন তৈরি করে:
-
শিয়া মুসলমানরা বহু শরিয়া রাষ্ট্রে কেবল বিদ্বেষের শিকার নয়, তাদের নামেই ফতোয়া জারি হয় (উদাহরণ: সৌদি আরব ও পাকিস্তানে)।
-
আহমদিয়া সম্প্রদায়কে অনেক দেশে অমুসলিম হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে, এমনকি তাদের ‘মুসলমান’ পরিচয় ব্যবহার করাও আইনত নিষিদ্ধ।
যার ফলে প্রশ্ন আসে—শরিয়ায় “মুসলমান” বলতে কে বোঝায়?
যদি কেউ কোরআনে বিশ্বাস করেও মুহাম্মদকে শেষ নবী না মানে, তবে শরিয়া তাকে মুসলিম মানে না। অর্থাৎ “মুসলমান” পরিচয়ও এখানে রাজনৈতিক ও আইনি নিয়ন্ত্রণাধীন এক শ্রেণিবিভাজিত গোষ্ঠী।
৬.৪ নারী, গরিব, অশ্বেতাঙ্গ, অ-আরব মুসলমানদের গুরুত্বহীনতা
শরিয়া বাস্তবে এমন এক কাঠামো তৈরি করে যেখানে নেতৃত্ব, জ্ঞানের দখল, ফতোয়ার ক্ষমতা—সবকিছু কেবল পুরুষ, ধনী, আরব, এবং নির্দিষ্ট মাজহাব অনুসারীদের হাতে থাকে। ফলে গরিব, অশিক্ষিত, নারীদের ধর্মীয় বা সামাজিক বিষয়ে প্রভাব থাকেই না।
সারমর্ম
শরিয়ার চোখে সব মুসলমান সমান নয়। এখানে আরব মুসলমানেরা শ্রেষ্ঠ, অ-আরবরা অধস্তন; নির্দিষ্ট মাজহাবের লোকেরা বিশুদ্ধ, বাকিরা বিভ্রান্ত; পুরুষরা কর্তৃত্বে, নারীরা অধীনে; ধনী ও ক্ষমতাবানরা মর্যাদার দাবিদার, গরিবরা শুধু আজ্ঞাবহ।
ফলে শরিয়া একটি জাতিগত, শ্রেণিগত ও মতাদর্শগত বৈষম্যের কাঠামো, যা ইসলামের দাবিকৃত “ভ্রাতৃত্ব”-এর ধারণাকে আঘাত করে।
৭. অর্থনীতি ও জিজিয়া: বৈষম্য ও চাপের আর্থিক কাঠামো
ইসলামী শরিয়ার অধীনে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নীতিমালাও ধর্মীয় নিয়ম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এই কাঠামোতে অর্থনীতি স্বাধীন বা গণমুখী নয়; বরং তা ধর্মীয় শ্রেণিবিন্যাস ও শক্তিকে টিকিয়ে রাখার একটি হাতিয়ার। এখানে কর, সম্পদ বণ্টন, ও আর্থিক দায়িত্ব নির্ধারিত হয় ব্যক্তির ধর্ম, লিঙ্গ ও সামাজিক অবস্থান অনুসারে, যা একটি বৈষম্যমূলক এবং শোষণমূলক অর্থনৈতিক কাঠামো তৈরি করে।
৭.১ জিজিয়া: অমুসলিমদের উপর আর্থিক নিপীড়ন
শরিয়ায় অমুসলিমদের কাছ থেকে “জিজিয়া” নামক কর নেওয়া বাধ্যতামূলক। এটি একটি রাজনৈতিক ও ধর্মীয় কর, যা মুসলমানরা দিতে হয় না।
সূরা তওবা ৯:২৯ —
“তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর… যতক্ষণ না তারা জিজিয়া দেয় নিজ হাতে, অপমানিত অবস্থায়।”
এর মানে:
-
অমুসলিমরা শরিয়া রাষ্ট্রে বসবাস করতে চাইলে তাদেরকে অতিরিক্ত কর দিতে হবে শুধুমাত্র ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে।
-
মুসলমানদের করব্যবস্থা আলাদা, তারা জাকাত দেয় (যা এক প্রকার দান, সামাজিক কল্যাণের উদ্দেশ্যে), কিন্তু জিজিয়া একটি নির্মম ধর্মভিত্তিক অর্থনৈতিক বাধ্যবাধকতা।
-
অনেক সময় এই জিজিয়া চাপ প্রয়োগের হাতিয়ার হয়ে ওঠে—"জিজিয়া দাও, না হয় ইসলাম গ্রহণ করো।"
৭.২ অর্থনৈতিক শ্রেণিবিন্যাস: ধনী মুসলমান বনাম বঞ্চিত অমুসলিম
শরিয়াতে অমুসলিমদের শুধু বেশি কর দিতে বলা হয় না, বরং তাদের অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধাও সীমিত:
-
তারা সরকারি চাকরিতে নিয়োগ পায় না।
-
ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বৈষম্য ও অবমাননার শিকার হয়।
-
জমি, সম্পত্তি, ও পারিবারিক উত্তরাধিকারেও সীমাবদ্ধতা তৈরি করা হয়।
ফলে ধর্মের ভিত্তিতে একটা ধনী মুসলমান বনাম দরিদ্র অমুসলিম শ্রেণিবিভাজন গড়ে ওঠে।
৭.৩ নারীর আর্থিক অধিকার ও নিয়ন্ত্রণ
নারীরা উত্তরাধিকার পায় অর্ধেক (সূরা নিসা ৪:১১)
স্ত্রী নিজের আয় রাখতে পারলেও তার সামগ্রিক অর্থনৈতিক ক্ষমতা থাকে স্বামীর বা পুরুষ অভিভাবকের হাতে।
-
স্ত্রী ঘর থেকে বেরিয়ে আয় করতে চাইলে অনেক মাযহাব তা নিষিদ্ধ করে।
-
নারীর সম্পদ ব্যবহারে পুরুষ কর্তৃত্বের ধারণা শরিয়ার মধ্যে অনুমোদিত।
-
সন্তানদের অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তে নারীর ভূমিকা থাকে প্রায় শূন্যের কোঠায়।
৭.৪ সুদ নিষিদ্ধ: আধুনিক অর্থনীতির সঙ্গে সংঘর্ষ
শরিয়া “সুদ” (রিবা) নিষিদ্ধ করে (সূরা বাকারা ২:২৭৫-২৭৯)।
ফলে ব্যাংক, বিনিয়োগ, ঋণ ব্যবস্থা একেবারে ভিন্নভাবে পরিচালিত হয়:
-
শরিয়া অনুসারে "ইসলামিক ব্যাংকিং" চালু করা হয়, যেখানে সুদের বদলে মুনাফাভিত্তিক অংশীদারি ব্যবস্থার প্রচলন হয়।
-
কিন্তু এই মডেল বহু জায়গায় অস্পষ্ট, জটিল, এবং অব্যবস্থাপূর্ণ।
-
সুদের প্রতি এই ধর্মীয় বিদ্বেষ আধুনিক মূলধন অর্থনীতির স্বাভাবিক কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করে।
৭.৫ রাষ্ট্রের বাজেট: ধর্মীয় খাতকে অগ্রাধিকার
শরিয়া রাষ্ট্রে রাষ্ট্রীয় বাজেটের একটি বিশাল অংশ চলে যায়:
-
মসজিদ নির্মাণ ও মেরামত,
-
উলামা ও মুফতির বেতন,
-
হজ্ব ও ওমরার খরচ,
-
ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনুদান,
-
“দাওয়াহ” তথা ইসলাম প্রচারের জন্য রাষ্ট্রীয় ব্যয়।
এই খাতে অর্থ খরচের কারণে স্বাস্থ্য, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, পরিবেশ, শিল্প—এই সব গুরুত্বপূর্ণ খাতে বাজেট বরাদ্দ কমে যায়, যা রাষ্ট্রের সামগ্রিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে।
সারমর্ম
শরিয়ার অর্থনীতি একটি ধর্মভিত্তিক দমনমূলক কাঠামো। এতে অমুসলিমরা হয় আর্থিকভাবে কোণঠাসা, নারীরা হয় অর্থনৈতিকভাবে নির্ভরশীল, আর রাষ্ট্রের সম্পদ চলে যায় ধর্মীয় শ্রেণির পেছনে। এর ফলে অর্থনীতি হয়ে ওঠে শক্তির হাতিয়ার, সমতার নয়। যেখানে আধুনিক অর্থনীতি উদ্ভাবন, উদ্যোগ, ও স্বাধীনতার উপর নির্ভরশীল, শরিয়া সেখানে আরোপ করে বাধা, নিয়ন্ত্রণ, এবং ধর্মীয় বৈষম্য।
৮. আইন প্রণয়ন ও বিচার: যুক্তির বদলে বিশ্বাস
ইসলামী শরিয়ার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্যগুলোর একটি হলো—এটি একটি আলৌকিক ও অপরিবর্তনীয় সূত্র ধরে আইন প্রণয়ন করে, যেখানে যুক্তি, মানবিকতা, সামাজিক বাস্তবতা, কিংবা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির কোনো ভূমিকা নেই। ফলে শরিয়া-ভিত্তিক আইন ও বিচারব্যবস্থা বাস্তব জগতের পরিবর্তন, মানবিক বিবেচনা কিংবা ন্যায়বোধের সঙ্গে তাল মেলাতে পারে না।
৮.১ কোরআন ও হাদিসই সর্বোচ্চ আইন: মানব রচিত আইন বাতিল
শরিয়া মানে শুধু ধর্মীয় আইন নয়; এটি একটি সম্পূর্ণ আইনতন্ত্র (legal system), যেখানে সংবিধান, দণ্ডবিধি, দেওয়ানি আইন, পারিবারিক আইন—সবকিছু নির্ধারিত হয় কোরআন, হাদিস, এবং ফিকহের উপর ভিত্তি করে।
-
কোনো প্রস্তাব সংসদে পাস হতে পারে না যদি তা শরিয়ার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়।
-
জনগণের চাহিদা, বিজ্ঞানসম্মত বিশ্লেষণ, বা আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হলেও শরিয়ার বিধান অপরিবর্তনীয়।
এর মানে—আইনের উৎস আল্লাহ, কিন্তু কার্যকর করে কিছু মানুষ (উলামা), যারা নিজেদের ব্যাখ্যাকেই “ঈশ্বরীয় নির্দেশ” বলে চাপিয়ে দেয়।
৮.২ যুক্তির চেয়ে তাকলিদ (অন্ধ অনুসরণ)
শরিয়া প্রচার করে ‘তাকলিদ’ বা পূর্ববর্তী আলেমদের অনুসরণ করাকে। একে বলা হয় “ইজমা” বা “ঐক্যমত”। এর ফলে:
-
স্বাধীন চিন্তা ও ব্যাখ্যার সুযোগ থাকে না।
-
একজন ব্যক্তি বা রাষ্ট্র আইন প্রণয়নের আগে নিজের বিবেক বা যৌক্তিকতা ব্যবহার করতে পারে না—বরং তাকে হাজার বছরের পুরনো মত অনুসরণ করতে হয়।
-
এমনকি অনেক শরিয়া আইন এমনও আছে যার পেছনে কোনো যুক্তি নেই, আছে শুধু "আল্লাহ বলেছেন তাই মানতে হবে" ধাঁচের বিশ্বাস।
৮.৩ বিচারব্যবস্থায় প্রমাণ নয়, ধর্মই মুখ্য
-
ধর্ষণের বিচারেও চারজন পুরুষ সাক্ষীর দাবি করা হয় (সূরা নূর ২৪:৪)। না পেলে ধর্ষিতাকেই ব্যভিচারী হিসেবে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
-
সাক্ষী গ্রহণের ক্ষেত্রেও নারীর সাক্ষ্য অর্ধেক হিসেবে গণ্য হয় (সূরা বাকারা ২:২৮২)।
-
একে বলা হয় ‘আল্লাহর বিধান’—সেটি মানবিকভাবে নির্মম হলেও তা প্রশ্ন করা যায় না।
৮.৪ যুক্তির প্রতি বিদ্বেষ: যারা প্রশ্ন তোলে, তারা কাফির
শরিয়ার বিরুদ্ধে প্রশ্ন করাও অনেক সময় 'কুফরী' হিসেবে বিবেচিত হয়।
উদাহরণস্বরূপ:
-
কেউ যদি বলে, "নারীর সাক্ষ্য কেন অর্ধেক?"
-
বা "ধর্মত্যাগ করলে মৃত্যুদণ্ড কেন?"
-
কিংবা "শরিয়ার অনেক আইন কি যুগোপযোগী?"
তাহলেই তাকে বলা হয় ‘নাস্তিক’, ‘মুনাফিক’, ‘গোমরাহ’।
এইভাবে যুক্তিকে ‘ঈমানের বিপরীত’ বানিয়ে রাখা হয়।
৮.৫ পরিবর্তনের অক্ষমতা: স্থবির আইনব্যবস্থা
শরিয়া আইন অপরিবর্তনীয় বলে গণ্য হয়, যার মানে:
-
সমাজ যতই বদলাক না কেন, আইন বদলানো যাবে না।
-
দাসপ্রথা, বহুবিবাহ, নারীর অধিকার—এসব শত শত বছর আগের অবস্থানেই থেমে থাকে।
-
আধুনিক চাহিদা, প্রযুক্তি, গণতন্ত্র, মানবাধিকার—এসবের সঙ্গে শরিয়ার কোনও সামঞ্জস্য থাকে না।
সারমর্ম
শরিয়ার আইন ও বিচারব্যবস্থা একটি অন্ধ বিশ্বাস-নির্ভর, যুক্তিহীন, এবং স্থবির কাঠামো। এখানে ন্যায়বিচার নির্ভর করে ঈশ্বরের ব্যাখ্যার উপর, মানুষের প্রয়োজনে নয়। যুক্তি, মানবিকতা, বা বাস্তবতা এখানে স্থান পায় না; বরং প্রশ্ন তুললেই সেটা অপরাধ হয়ে যায়। ফলে এই আইনব্যবস্থা ন্যায়ের নয়, ভয় ও অন্ধতার ভিত্তিতে টিকে থাকে।
৯. শিক্ষা, বিজ্ঞান ও চিন্তার স্বাধীনতা: শরিয়ার সীমাবদ্ধতা
ইসলামী শরিয়া ব্যবস্থার অন্যতম বড় সমস্যা হলো—এটি আধুনিক শিক্ষা, বিজ্ঞান, এবং মুক্ত চিন্তাকে বাধাগ্রস্ত করে। যেখানে আধুনিক বিশ্ব দ্রুত এগিয়ে চলছে যুক্তি, পরীক্ষণ, ও নব্বই শতকের বিজ্ঞান ভিত্তিক প্রযুক্তিতে, সেখানে শরিয়া অনেক সময় পুরনো কুসংস্কার, স্থবির বিশ্বাস, এবং ধর্মীয় নিয়মাবলীর অনুগত অবস্থায় আটকে রাখে সমাজকে।
৯.১ ধর্মীয় শিক্ষার একক আধিপত্য
-
শরিয়া-ভিত্তিক রাষ্ট্রে শিক্ষা ব্যবস্থা মূলত ধর্মীয় শিক্ষার ওপর কেন্দ্রীভূত হয়।
-
সাইকোলজি, সায়েন্স, ইতিহাস, মানবাধিকার, রাজনীতি বিজ্ঞান—এসব বিষয়ে প্রগতিশীল শিক্ষা বন্ধ হয়ে যায়।
-
শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন করার স্বাধীনতা নেই; ধর্মীয় গ্রন্থ ও ফতোয়াকে অবাধ্য হওয়া নিষিদ্ধ।
৯.২ বিজ্ঞানবিরোধী মনোভাব
-
শরিয়া ভিত্তিক ব্যাখ্যা বিজ্ঞানের বিপরীতধর্মী হয়, যেমন “কোথায় মানব ও অন্যান্য জীবের বিবর্তন?”
-
বিজ্ঞান ভিত্তিক অনেক তত্ত্ব, যেমন মহাবিশ্বের বিস্তার, চিকিৎসাবিজ্ঞান, মেটিরিয়ালিজমকে অবিশ্বাস বা নিন্দা করা হয়।
-
ইসলামিক ফান্ডামেন্টালিস্টরা বিজ্ঞানের বদলে হাদিস, ফিকহ এবং কোরআনীয় ব্যাখ্যার ওপর জোর দেন।
৯.৩ চিন্তার স্বাধীনতা ও সংশয়ের অবরোধ
-
প্রশ্ন তোলা বা সংশয় প্রকাশ করাই শরিয়ার চোখে “ঈমান দুর্বলতা” বা “ধর্ম অবমাননা”।
-
যারা ধর্মীয় শাসন বা কোরআনের ব্যাখ্যার বিরুদ্ধে যায়, তাদের শাস্তি হতে পারে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা থেকে শুরু করে ফৌজদারি মামলা, বা মারাত্মক শাস্তি।
-
এ কারণে তরুণদের মধ্যে নতুন চিন্তা, নতুন দৃষ্টিভঙ্গি বিকাশ পায় না।
৯.৪ নারীর শিক্ষার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা
অনেক শরিয়া-আধিপত্যশীল দেশে নারীদের উচ্চশিক্ষায় সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়, বিশেষ করে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, ও সৃজনশীল বিষয়ে।
-
আফগানিস্তানে তালেবান শাসনামলে নারীদের শিক্ষাগত অধিকার মারাত্মকভাবে হ্রাস পেয়েছে।
-
অনেক স্থানেই নারীদের শিক্ষার সুযোগ কমিয়ে দেওয়া হয় ‘ঐতিহ্য’ ও ‘ধর্মীয় কারণে’।
সারমর্ম
শরিয়া আধিপত্য সমাজকে সৃষ্টিশীলতা, যুক্তি ও বৈজ্ঞানিক বিকাশ থেকে বঞ্চিত করে, ফলে রাষ্ট্রের উন্নয়ন ও আধুনিকীকরণ বাধাগ্রস্ত হয়। শিক্ষার সংকীর্ণতা ও চিন্তার বন্ধুত্বহীন পরিবেশে নতুন প্রজন্মের মধ্যে মুক্তচিন্তার বিকাশ অসম্ভব হয়ে পড়ে। এই সীমাবদ্ধতাই শরিয়ার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
১০. সামাজিক ও রাজনৈতিক উদারতা বনাম শরিয়ার দমন
একটি আধুনিক রাষ্ট্রের জন্য সবচেয়ে জরুরি ভিত্তি হলো উদারতা, সহনশীলতা ও ভিন্নমতের প্রতি সম্মান। ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রের অন্যতম লক্ষ্য হলো—সব নাগরিককে সমান মর্যাদা দেওয়া, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, এবং রাষ্ট্রকে নিরপেক্ষ অবস্থানে রাখা। কিন্তু শরিয়া আইনের অধীনে রাষ্ট্র ও সমাজে এই নীতিগুলো সম্পূর্ণভাবে হুমকির মুখে পড়ে।
১০.১ ভিন্নমতের প্রতি অসহিষ্ণুতা
শরিয়াভিত্তিক সমাজে:
ভিন্ন ধর্মাবলম্বী, ধর্মনিরপেক্ষ, নাস্তিক, নারীবাদী, সমকামী, এমনকি কিছু মুসলমান গোষ্ঠীও (যেমন শিয়া বা আহমদিয়া) লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়।
রাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিমত করা মানে হয় ধর্মবিরোধিতা।
ফলাফল: রাষ্ট্রীয় দমন, সামাজিক বয়কট, হামলা, হত্যা, কিংবা নির্বাসন।
১০.২ ধর্মীয় পুলিশের ভয়ভীতির সংস্কৃতি
যেসব দেশে শরিয়ার প্রভাব প্রবল, সেখানে ধর্মীয় পুলিশ (হিসবা বা মোরাল পুলিশ) কার্যকর থাকে।
নারীর পোশাক যাচাই, রোজা রাখা হচ্ছে কিনা দেখা, মসজিদে না যাওয়ার কারণে প্রশ্ন করা—এসব হয় নিয়মিত ঘটনা।
এটি ব্যক্তিগত জীবনে রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ এবং নাগরিক স্বাধীনতার লঙ্ঘন।
১০.৩ সংখ্যালঘুদের প্রতি দমনমূলক আচরণ
শরিয়াভিত্তিক রাষ্ট্রে:
সংখ্যালঘু ধর্মাবলম্বীরা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বৈষম্য ও নির্যাতনের শিকার হয়।
উদাহরণস্বরূপ, পাকিস্তানে হিন্দু ও খ্রিস্টানদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান, মন্দির বা গির্জা হামলার শিকার হয়েছে বহুবার।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থা অনেক সময় তাদের রক্ষা তো করে না, বরং অপরাধীদের পৃষ্ঠপোষকতা করে।
১০.৪ নারীদের স্বাধীনতার কল্পনাও বিপজ্জনক
নারীদের শিক্ষা, পোশাক, মতপ্রকাশ—সব কিছুই ধর্মীয় বিধির আওতায় আসে।
যারা স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে চায় (যেমন ইরানের হিজাববিরোধী আন্দোলনকারী নারীরা), তারা রাষ্ট্রীয় দমন ও কারাবন্দিত্বের শিকার হয়।
১০.৫ শিল্প, সাহিত্য, ও সংস্কৃতির দমন
শরিয়াবাদী রাষ্ট্রে কবিতা, গান, সিনেমা, নাটক—সবকিছুর উপর বিধিনিষেধ আরোপ হয়।
ইসলাম বিরোধী কিছু থাকলেই তা ‘হারাম’ ঘোষিত হয়।
শিল্পীদের ওপর ফতোয়া জারি হয়, বই নিষিদ্ধ হয়, সিনেমা বন্ধ করা হয়, বা সরাসরি শাস্তি দেওয়া হয়।
সারমর্ম
ইসলামী শরিয়ার আওতাভুক্ত রাষ্ট্র ও সমাজে সামাজিক উদারতা ও রাজনৈতিক বহুত্ববাদের স্থান নেই। সেখানে ভিন্নমত মানেই শত্রুতা, সমালোচনা মানেই শাস্তিযোগ্য অপরাধ, স্বাধীনতা মানেই ঈমানহীনতা। এমন এক সমাজ গড়ে ওঠে যেখানে আতঙ্কে, অনুগত্যে, ও অন্ধ বিশ্বাসে মানুষকে বাঁচতে হয়। এটাই শরিয়ার রাজনৈতিক ও সামাজিক দিকের সবচেয়ে অমানবিক ও সংকীর্ণ রূপ।
সারসংক্ষেপ ও উপসংহার: ‘শরিয়া মানে মুক্তি, নাকি দাসত্ব?’
ইসলামী শরিয়াকে সমর্থকরা প্রায়শই দাবি করে—“এটাই আল্লাহর নাযিলকৃত আইন, যেটা মানবতার মুক্তি নিশ্চিত করবে।” কিন্তু আমরা যখন শরিয়ার বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করে দেখি—সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ও নৈতিক—তখন বুঝি এই আইন বাস্তবে একটি আধিপত্যমূলক, বৈষম্যমূলক এবং দমনমূলক ব্যবস্থার রূপ ধারণ করে।
যে সমাজ কায়েম হবে শরিয়ার মাধ্যমে, সেখানে:
অমুসলিমরা হবে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক, জিজিয়া দিতে বাধ্য, অধিকার সীমিত।
নারীরা হবে পুরুষের ছায়া, তাদের জীবন পরিচালিত হবে পুরুষ অভিভাবকের ইচ্ছানুযায়ী।
ভিন্নমত হবে অপরাধ, সংশয় হবে ধর্মত্যাগ, আর প্রশ্ন হবে ধর্মদ্রোহ।
আইন হবে অপরিবর্তনীয়, যুক্তি-প্রমাণের চেয়ে প্রাচীন ব্যাখ্যা প্রাধান্য পাবে।
শাস্তি হবে মধ্যযুগীয়, দৃষ্টান্তমূলক আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য পাথর ছোঁড়া, হাত কাটা, বেত্রাঘাত।
রাজনীতি হবে ধর্মের অধীন, জনগণ নয়—“আল্লাহর আইন” হবে সর্বেসর্বা।
বিজ্ঞান, সাহিত্য, শিল্প, মানবতা—সব কিছুই হবে ধর্মীয় অনুমতির অপেক্ষায়।
এই সমাজ হবে ভয়ের, নিয়ন্ত্রণের, ও অন্ধ অনুসরণের সমাজ। যেখানে প্রেম, যুক্তি, সমানাধিকার, ও স্বাধীনতা—এসব শব্দ কেবল কবিতায় বেঁচে থাকবে, বাস্তবে নয়।
তাহলে প্রশ্ন উঠতেই পারে:
শরিয়া কি সত্যিই মুক্তির পথ?
নাকি তা এক ধর্মীয় দাসত্ব, যেখান থেকে মুক্তি পেতে হলে ঈমান হারাতে হয়?
একজন বিবেকবান, যুক্তিবাদী মানুষের কাছে শরিয়ার সমাজ হতে পারে না আদর্শ।
কারণ মানুষের প্রকৃত মুক্তি আসে চিন্তার স্বাধীনতা, প্রশ্ন করার অধিকার, এবং নিজ সিদ্ধান্ত নিজে নেবার স্বাধীনতা থেকে—না যে কোনো ধর্মগ্রন্থের নামধারী মধ্যযুগীয় বিধান থেকে।
শেষ কথা:
শরিয়া যদি সত্যিই মুক্তির পথ হতো, তবে শরিয়া-শাসিত রাষ্ট্রগুলো থেকে মানুষ পালাত না।
তাদের বুক হতো না জ্বলন্ত প্রশ্নে পূর্ণ—“আমি মানুষ, না শুধু মুসলমান?”
আর তখনই উত্তরটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে—শরিয়া মুক্তি দেয় না, দাসত্বে বাঁধে।