নারী: পুরুষতন্ত্রের নির্মাণ ও স্বাধীনতার সংগ্রাম

 


ভূমিকা


নারী—একটি শব্দ, একটি অস্তিত্ব, একটি সামাজিক শ্রেণি এবং এক অবিরাম সংগ্রামের নাম। মানব সভ্যতার আদিকাল থেকে নারী তার স্বকীয়তা, স্বাধীনতা ও সমানাধিকারের জন্য লড়াই করে চলেছে। নারীকে নিয়ে সমাজের নানা দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে, কিন্তু একটি বিষয় নিশ্চিত—তার অবদান ছাড়া সভ্যতা অগ্রসর হতে পারত না।

বাংলাদেশের অন্যতম প্রথাবিরোধী লেখক হুমায়ুন আজাদ তার বই "নারী" তে নারীর অবস্থান, পুরুষতন্ত্রের নিপীড়ন এবং স্বাধীনতার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে গভীর আলোচনা করেছেন। এই লেখায় আমরা নারী বিষয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গি, নারীর প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি এবং নারীর মুক্তির উপায় সম্পর্কে আলোচনা করব।


---

নারী ও পুরুষতন্ত্র

নারী যে সমাজে বাস করে, সেটি মূলত পুরুষতান্ত্রিক। পুরুষতন্ত্রের মূল ভিত্তি হলো নারীর ওপর আধিপত্য বিস্তার করা এবং তাকে একটি অধস্তন শ্রেণি হিসেবে গড়ে তোলা। হুমায়ুন আজাদ তার বইতে বলেন, "পুরুষ নারীকে নিজের দাস বানিয়ে রাখতে চায়; তাকে কখনো স্ত্রী, কখনো মা, কখনো কন্যার ভূমিকায় বন্দি করে রাখে।"

প্রকৃতপক্ষে, নারীর ভূমিকা নির্ধারণ করা হয় সামাজিক কাঠামোর ভিত্তিতে, যেখানে তাকে আজ্ঞাবহ, কোমল ও ত্যাগী হিসেবে দেখানো হয়। নারীর বুদ্ধিমত্তা, ক্ষমতা, প্রতিভা অনেক ক্ষেত্রেই অগ্রাহ্য করা হয় বা সংকুচিত করা হয়।


---

নারীর প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি

নারীকে সমাজ বিভিন্ন আঙ্গিকে দেখে—

1. মা রূপে: সমাজ মাকে অত্যন্ত শ্রদ্ধার চোখে দেখে, তবে মায়ের ভূমিকা কেবল সন্তান প্রতিপালন ও পরিবারের সেবার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার চেষ্টা করা হয়।


2. স্ত্রী রূপে: স্ত্রীর ভূমিকা স্বামীর প্রতি কর্তব্য পালনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা হয়।


3. কন্যা রূপে: কন্যা হওয়া যেন একটি বোঝা। অনেক সমাজেই কন্যা সন্তানকে অবহেলা করা হয়।



এই সমস্ত চিত্র নারীর স্বাধীনতা সংকুচিত করে। হুমায়ুন আজাদ বলেন, "নারী জন্মায় স্বাধীনভাবে, কিন্তু সমাজ তাকে পরাধীন করে ফেলে।"


---

নারীর মুক্তির উপায়

নারীকে স্বাধীন করতে হলে তাকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে হবে। শিক্ষাই একমাত্র শক্তি যা তাকে আত্মনির্ভরশীল করে তুলতে পারে। হুমায়ুন আজাদ জোর দিয়ে বলেছেন যে, "শিক্ষিত নারী কখনোই পরাধীন থাকতে পারে না।"

এছাড়া নারীর অর্থনৈতিক মুক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন হলে নারী নিজের জীবন সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে, অন্যের ওপর নির্ভরশীল থাকবে না। নারীর প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আনাও জরুরি। সমাজকে বুঝতে হবে যে, নারী কোনো বস্তু নয়, বরং একজন স্বাধীন মানুষ।


---

উপসংহার

নারীর অধিকার ও স্বাধীনতা কেবল নারীর বিষয় নয়, এটি একটি সামগ্রিক মানবাধিকার ইস্যু। নারী মুক্ত হলে সমাজ মুক্ত হবে, উন্নত হবে। পুরুষতন্ত্র ভেঙে নারীর জন্য একটি স্বাধীন ও সমান অধিকারসমৃদ্ধ সমাজ গড়ে তুলতে হলে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

হুমায়ুন আজাদের "নারী" বইটি এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোকপাত করে, যা এখনো আমাদের সমাজে সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। পরিবর্তন সহজ নয়, তবে একদিন এই পরিবর্তন আসবেই।



ব্লগটি তৈরি হয়েছে। যদি কোনো সম্পাদনা বা বাড়তি তথ্য সংযুক্ত করতে চাও, তাহলে জানাও!


Post a Comment

Previous Post Next Post