Header Ads

Breaking News
recent

বাবা যাচাই হয় ল্যাবে ঈশ্বর যাচাই হয় গল্পে

 



ভূমিকা

ইন্টারনেটে মাঝে মাঝে এমন কিছু মন্তব্য চোখে পড়ে, যা দেখে মনে হয় মানুষ এখনো সত্য-মিথ্যার পার্থক্য বোঝার জন্য বিজ্ঞানকে নয়, বরং কল্পনাকে বেশি গুরুত্ব দেয়।
সম্প্রতি এক ধর্মপ্রাণ ভদ্রলোক আমাকে উদ্দেশ্য করে লিখলেন:

তাইলে তোর মনে কি এই বিষয়ে সন্দেহ আসে না যে, তুই যারে বাবা বলে ডাকোস, সে আসলেই তোর বাবা কি না?

প্রথমে হাসি পেলেও, পরে বুঝলাম বিষয়টি গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা দরকার। কারণ এর মধ্যে লুকিয়ে আছে এক ধরণের ভুল যুক্তি যেখানে যাচাইযোগ্য বিজ্ঞানের সঙ্গে যাচাইহীন ধর্মীয় দাবিকে এক কাতারে বসানোর চেষ্টা করা হয়।

বাস্তব জগতে প্রমাণ

কার আসল বাবা কে, তা জানার জন্য কোনো কল্পকাহিনি বা বিশ্বাসের দরকার নেই। আধুনিক বিজ্ঞান DNA টেস্ট দিয়ে পিতৃত্ব প্রায় শতভাগ নিশ্চিত করে দিতে পারে।

 DNA বা Deoxyribonucleic Acid হলো জীবের জেনেটিক নকশা, যা প্রতিটি কোষে থাকে।
 DNA টেস্টে সন্তানের ও সম্ভাব্য পিতার জেনেটিক মার্কার মিলিয়ে দেখা হয়।
এই পদ্ধতি আদালত, অভিবাসন বিভাগ, এমনকি ফৌজদারি তদন্তেও স্বীকৃত।

অতএব, যদি বাবার পরিচয় নিয়ে কারো সন্দেহ থাকে, তবে ল্যাব টেস্টই চূড়ান্ত উত্তর দেয়— ব্যক্তিগত মতামতের এখানে কোনো ভূমিকা নেই।

 ধর্মীয় দাবির ক্ষেত্রে বাস্তবতা

এখন তুলনা করি ধর্মীয় দাবির সঙ্গে। আল্লাহ, ফেরেশতা, জান্নাত বা জাহান্নামের অস্তিত্ব প্রমাণ করার জন্য কোনো পরীক্ষাগার নেই।

* ঈশ্বরকে টেলিস্কোপে দেখা যায় না।
* ফেরেশতাদের মাইক্রোস্কোপে ধরা যায় না।
* জান্নাত বা জাহান্নামের GPS লোকেশন নেই।

এসব কেবল ধর্মগ্রন্থে বর্ণিত কাহিনি, যার কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ইতিহাস বলছে, ভিন্ন সভ্যতা ভিন্ন ভিন্ন ঈশ্বরের গল্প বানিয়েছে এবং প্রত্যেকেই দাবি করেছে তারটাই সত্য।

 মূল পার্থক্য

বাবা যাচাই করা যায় বিজ্ঞান দিয়ে, কিন্তু ঈশ্বর যাচাই হয় শুধু বিশ্বাস দিয়ে।
বিজ্ঞান প্রমাণের ওপর দাঁড়ায়, ধর্ম দাঁড়ায় আবেগের ওপর।
এই দুইকে সমান করে দেখা মানে আপেলের ওজন ভূতের সঙ্গে মাপা যা অর্থহীন।

 কেন এই তুলনা হাস্যকর

যখন কেউ বাবার অস্তিত্ব নিয়ে সন্দেহ তোলে, তখন সে বুঝিয়ে দেয় যে তার বিজ্ঞানের মৌলিক ধারণা নেই। পিতৃত্ব প্রমাণের জন্য বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি হাতে আছে, কিন্তু ঈশ্বরের অস্তিত্বের জন্য কেবল গল্প, প্রচলিত বিশ্বাস এবং ব্যক্তিগত অনুভূতি ছাড়া কিছুই নেই।

তাহলে সরাসরি কথায়:
আগে নিজের কল্পনার বাপের অস্তিত্ব বিজ্ঞানের মাধ্যমে প্রমাণ করুন, তারপর অন্যের আসল বাবার ব্যাপারে সন্দেহ তুলুন।

 উপসংহার

আবেগ দিয়ে যুক্তি প্রমাণ করা যায় না।
বাবার পরিচয় বিজ্ঞান যাচাই করতে পারে, কিন্তু ঈশ্বরের দাবিকে যাচাই করার মতো কোনো বৈজ্ঞানিক উপায় নেই।
যুক্তিবাদে, প্রমাণহীন দাবি কখনোই প্রমাণিত সত্যের সমান নয়।

1 টি মন্তব্য:

Blogger দ্বারা পরিচালিত.