নাটক: প্রশ্নবিদ্ধ

 

 ভূমিকা:

১. রাশেদ হোসেন
বয়স ৩০। একজন চিন্তাশীল, যুক্তিবাদী ইউটিউবার। ইসলামসহ সবধরনের অন্ধ বিশ্বাসের সমালোচনা করে ভিডিও বানায়। সাহসী, যুক্তিপূর্ণ, এবং ভাবনাপ্রবণ। কথাবার্তায় দৃঢ়, কিন্তু আক্রমণাত্মক নয়।

২. এসআই কামরুজ্জামান
বয়স ৪০। থানার উপপরিদর্শক। আইন মানে দায়িত্ব বলে বিশ্বাস করে, কিন্তু ভেতরে দ্বিধা আছে। রাশেদের কথা শুনে তার বিশ্বাস ও কর্তব্যের মাঝে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়।

৩. কনস্টেবল হাবিব
বয়স ৩৫। অন্ধভাবে ধর্মবিশ্বাসী। যুক্তি ও প্রশ্নের বিরুদ্ধে চরম মনোভাব পোষণ করে। রাশেদকে শত্রু মনে করে।

৪. ওসি জহির
বয়স ৫০। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। অভিজ্ঞ ও শৃঙ্খলাবান। রাষ্ট্র এবং কর্তৃপক্ষকে অগ্রাধিকার দেয়। কিন্তু রাশেদের ভাবনা তার ভিতরেও পরিবর্তনের সূত্রপাত ঘটায়।

৫. নাহিদা হোসেন
বয়স ২৫। রাশেদের ছোট বোন। শিক্ষিত, স্বাধীনচেতা, স্পষ্টভাষী। ভাইয়ের আদর্শে বিশ্বাস করে এবং তার পাশে দাঁড়ায়।

৬. নেপথ্য কণ্ঠ
রাশেদের নিজের চিন্তার প্রতিধ্বনি। দর্শককে রাশেদের অন্তর্দ্বন্দ্ব, উপলব্ধি ও আত্মবিশ্বাসে প্রবেশ করায়। প্রতিটি একান্ত মুহূর্তে দর্শকের মনের দরজায় কড়া নাড়ে।

দৃশ্য: রাশেদের বাসা, রাত। ঘরের ভেতর ছিমছাম আলো, ডেস্কে ল্যাপটপ, মাইক্রোফোন ও বইপত্র। ক্যামেরার লাল আলো দেখায় যে রেকর্ডিং চলছে। রাশেদ ভিডিওতে
 শেষ কথা বলছে ।

রাশেদ:
আপনারা ভাবছেন, আমি এত প্রশ্ন করি কেন?
কারণ ধর্ম মানুষকে প্রশ্ন করতে দেয় না।
কিন্তু যে বিশ্বাস প্রশ্নে ভেঙে পড়ে, তা কি আদৌ সত্য?

(রেকর্ড বন্ধ করে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ায়। ঠিক তখনই দরজায় জোরে কড়া নড়ে – ধড় ধড় ধড়।)

রাশেদ (চমকে ওঠে):
কে?

(বাইর থেকে গম্ভীর গলা)
পুলিশ। দরজা খুলুন।

(রাশেদ দরজা খোলে। ভেতরে ঢোকে এসআই কামরুজ্জামান, কনস্টেবল হাবিব সহ আরও দুই পুলিশ।)

এসআই কামরুজ্জামান:
আপনার নাম রাশেদ হোসেন?

রাশেদ:
হ্যাঁ। কী হয়েছে?

কনস্টেবল হাবিব (চিৎকার করে):
তুই ধর্ম নিয়ে যা বলিস, তার শাস্তি এখন পাবি!

এসআই কামরুজ্জামান (শান্তভাবে):
আপনাকে রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপ এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে গ্রেফতার করা হচ্ছে।

রাশেদ (চোখে চোখ রেখে):
রাষ্ট্র আর ধর্ম—দুটো আলাদা বিষয়। আমি ধর্ম নিয়ে কথা বলেছি, রাষ্ট্র নিয়ে নয়।

কনস্টেবল হাবিব:
ধর্ম মানেই রাষ্ট্র। ইসলাম মানেই আইন।

রাশেদ:
তাহলে তো আমি রাষ্ট্র নিয়েই প্রশ্ন করেছি, তাই তো?

এসআই কামরুজ্জামান:
দয়া করে আমাদের সঙ্গে চলুন। থানায় গিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে।

রাশেদ (মুচকি হেসে):
আপনারা কী ভয় পাচ্ছেন? আমার মুখের কথা?

কনস্টেবল হাবিব:
তোর মুখেই তো বিষ। তোকে চুপ করাতে হবে।

রাশেদ:
মুখ চেপে ধরলে সত্য থামে না। সে অন্য মুখ খোঁজে।

(এসআই ইশারা করলে কনস্টেবলরা রাশেদকে হাতকড়া পরাতে আসে। রাশেদ বাধা দেয় না। ধীরে ধীরে তার কণ্ঠে ধ্বনিত হয় দৃঢ়তা।)

রাশেদ (আবার মুখ ঘুরিয়ে):
আমি ধর্মের সত্যতা যাচাই করেছি। এতে দেশের বা মানুষের কী ক্ষতি হয়েছে, বলতে পারেন?

এসআই কামরুজ্জামান (কিছুক্ষণ চুপ থেকে):
আপনি থানায় গিয়ে বলেন। এখানে বলা ঠিক হবে না।

(পুলিশ রাশেদকে নিয়ে বেরিয়ে যায়।)

(রাশেদের মনের কথা):
তারা আমার প্রশ্নে ভয় পেয়েছে । আমি ভয় পাই না।
কারণ আমি জানি—ভয়ের গভীরে চাপা পড়ে থাকে উত্তর।

থানার জেরা কক্ষ

দৃশ্য: থানার একটি জেরা কক্ষ। দেয়ালে দেশের পতাকা, প্রাচীন আইন বইয়ের আলমারি, এবং উপরে টাঙানো কিছু ধর্মীয় বাণী। রাশেদের মুখে ফোকাস করে একটি লাইট। সে চেয়ারে বসা, হাতকড়া পরানো। টেবিলের অপর পাশে বসেন এসআই কামরুজ্জামান, পাশে হাবিব দাঁড়িয়ে, কিছু দূরে ওসি জহির আসেন।

ওসি জহির:
তুমি জানো তুমি কী করছো?

রাশেদ (চোখে চোখ রেখে):
প্রশ্ন করছি।

ওসি জহির:
না। তুমি রাষ্ট্রীয় স্থিতি নষ্ট করছো। ধর্ম নিয়ে খোঁচা মারছো।

রাশেদ:
আমি তথ্য দিচ্ছি।
যদি সত্য না হতো, তাহলে আপনারা পাল্টা তথ্য দিয়ে উত্তর দিতেন।
গ্রেফতার করতেন না।

কনস্টেবল হাবিব (উত্তেজিত হয়ে):
তুই আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে নিয়ে বিদ্রুপ করিস! তোকে ছেড়ে দেওয়া মানে হাজারো মুমিনের ঈমান নষ্ট করা!

রাশেদ (ধীরে বলে):
আপনাদের ঈমান এত দুর্বল?
একটা ভিডিও দেখে নষ্ট হয়ে যায়?

এসআই কামরুজ্জামান (মাথা নিচু করে ফাইল ওলটায়):
তুমি বলেছিলে, মুহাম্মদের জীবন ইতিহাসের সাথে মেলে না। এর উৎস কী?

রাশেদ:
ইতিহাস বই। প্রাচীন আরবি সূত্র, বাইরের ইতিহাসবিদদের রেকর্ড, এমনকি হাদিসগুলোও।

ওসি জহির:
তোমার মতাদর্শ তরুণদের প্রভাবিত করছে। তারা ধর্মকে প্রশ্ন করছে।

রাশেদ:
তরুণরা প্রশ্ন করলে সমস্যা কোথায়?
যদি ধর্ম সত্য হয়, তবে প্রশ্নে ভয় নেই।
আর যদি প্রশ্নে কেঁপে ওঠে, তাহলে তার ভিত্তি ছিল কোথায়?

কনস্টেবল হাবিব (গর্জে ওঠে):
তুই শালা শত্রু! ইসলামের শত্রু! রাষ্ট্রের শত্রু!

রাশেদ:
আমি শত্রু নই। আমি আয়নার মতো।
আমি শুধু ধরিয়ে দিচ্ছি—ভুল কোথায়।

এসআই কামরুজ্জামান (ধীরে):
তুমি কি সত্যিই বিশ্বাস করো, তুমি যা করছো তা মানুষের উপকারে আসবে?

রাশেদ:
আমি বিশ্বাস করি, অন্ধকার ভেদ করে আলো আনা দরকার।
আমি যা বলছি, তা কষ্টদায়ক হতে পারে।
কিন্তু কষ্ট না পেলে মানুষ চিন্তা করতে শেখে না।

ওসি জহির (চেয়ারে পেছনে হেলে):
তুমি কি নিজেকে কোনো মুক্তির দূত ভাবো?

রাশেদ (একটু হাসে):
না। কিন্তু আমি শুধু চুপ থাকতে পারি না।
আমি জানি, হাজারো মানুষ চুপ করে আছে।
আমি শুধু সেই চুপ করে থাকা কণ্ঠগুলোর আওয়াজ।

কনস্টেবল হাবিব (দাঁতে দাঁত চেপে):
তোকে আজই আদালতে পাঠানোর ব্যবস্থা করবো।

রাশেদ:
আপনি আমাকে পাঠান, আমি যাব।
তবে মনে রাখবেন, একজন প্রশ্নকর্তাকে থামানো যায়।
কিন্তু প্রশ্ন থেমে থাকে না।

(আলো নিভে আসে। শুধু রাশেদের মুখে আলোর রেখা রয়ে যায়।)

 (রাশেদ লক-আপে) 

দৃশ্য: অন্ধকার। ধীরে ধীরে একটি স্পটলাইট জ্বলে ওঠে। মাঝখানে রাশেদ একা বসে, পরনে সাদা-ছেঁড়া পাঞ্জাবি, মুখে চিন্তার রেখা। চারপাশ নীরব। বাইরে থানা, ভেতরে তার মন। এবার আমরা তার ভাবনার গভীরে প্রবেশ করি।

(রাশেদের নিজের কণ্ঠ, কিন্তু স্তরযুক্ত, যেন চিন্তা-ধারার প্রতিধ্বনি):
তাদের চোখে আমি আসামি।
কিন্তু আমার চোখে আমি প্রশ্নকর্তা।
তারা ভাবে আমি রাষ্ট্রদ্রোহী।
কিন্তু আমি তো শুধু মানুষের অন্ধ বিশ্বাসগুলো খুলে দেখাচ্ছি।
তারা ভাবে আমি ঈমান কাঁপিয়ে দিচ্ছি।
কিন্তু ঈমান কি এতই দুর্বল যে, একটুখানি যুক্তিতেই পড়ে যায়?

(আলো একটু বাড়ে। রাশেদ ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ায়। চারপাশে ধোঁয়ার আবরণ, যেন মস্তিষ্কের কুয়াশা। সে হেঁটে চলে যায় একদিকে, আবার ফিরে আসে। নিজেকেই প্রশ্ন করে, নিজেকেই উত্তর দেয়।)

রাশেদ:
আমি কি বাড়াবাড়ি করছি?
আমি কি সত্যিই মানুষকে বিভ্রান্ত করছি?
নাকি আমি শুধু আয়না তুলে ধরছি?
তারা আমার মুখের দিকে না তাকিয়ে, আয়নার ভাঙচুর করছে।

(একটি কণ্ঠ শোনা যায়, যেন কোনো অদৃশ্য রাষ্ট্রপ্রেমিকের কণ্ঠ):
তুমি দেশদ্রোহী!
তুমি বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াও!

রাশেদ:
আমি তথ্য দিই। প্রমাণ দিই।
তোমরা আবেগ দাও, হুমকি দাও, কুৎসা দাও।
তুমি আমাকে ‘নাস্তিক’ বলো, ‘ধর্মবিদ্বেষী’ বলো—
কিন্তু কোনোবারও তুমি বলো না, আমি মিথ্যা বলছি।

(দূরে এক নারীকণ্ঠ শোনা যায়—রাশেদের মা বা বোনের মত):
তুই কি জানিস, তোর কারণে সমাজে কেমন কথা হচ্ছে?
সবাই বলছে, তুই ধর্মবিরোধী হয়ে গেছিস…

রাশেদ (বুক ধরে):
তারা ভাবে আমি বদলে গেছি।
কিন্তু আসলে আমি চোখ খুলেছি।

(মঞ্চের পেছনে বড় একটি প্রশ্ন চিহ্ন আলোর ঝলকায় জ্বলজ্বল করে ওঠে)

নেপথ্য কণ্ঠ:
তুই একা নস।
তোর পিছনে আছে সমস্ত না বলা প্রশ্ন।
তুই শুধু তাদের কণ্ঠস্বর।
তুই চুপ করলেই তারা চিরকাল নিঃশব্দ থাকবে।

(আলো ধীরে ধীরে নিভে আসে। শেষ দৃশ্যে রাশেদ চেয়ারটায় আবার বসে, মাথা নিচু করে, চোখ বন্ধ, যেন নিজের মধ্যে গভীর এক স্থিরতা অনুভব করছে।)

নেপথ্য কণ্ঠ (একেবারে ধীরে, প্রায় ফিসফাসে):
ভয় একদিন যাবে।
সত্য একদিন উঠবে।
তোর কণ্ঠ হয়তো থাকবে না,
কিন্তু প্রশ্নটা বেঁচে থাকবে।

(পরেরদিন)
দৃশ্য: থানার একটি ছোট অফিস কক্ষ। জানালার পাশে টিনের বেঞ্চ, দেয়ালে ফ্যান ঘুরছে। বাইরে হালকা বৃষ্টি হচ্ছে 
। কক্ষের একপাশে রাশেদ বসা। পাশে এক কনস্টেবল পাহারায়। দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হয়। এসআই কামরুজ্জামান দরজা খুলে দেন।

এসআই কামরুজ্জামান:
তুমি?

নাহিদা:
আমি রাশেদের ছোট বোন। দেখা করার অনুমতি দিয়েছিলেন না?

এসআই (বলে উঠে দাঁড়িয়ে):
ঠিক আছে। পাঁচ মিনিটের বেশি না।

(নাহিদা ভেতরে ঢুকে, ভাইয়ের দিকে এগিয়ে যায়। রাশেদ তাকিয়ে থাকে। দুই ভাইবোনের চোখে কথা হয়। কনস্টেবল কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে।)

নাহিদা (চুপচাপ বসে):
তুমি কেমন আছ ভাইয়া?

রাশেদ:
ভালো আছি। এখনো আমার মুখ বন্ধ হয়নি।
তাই বেঁচে আছি।

নাহিদা (মৃদু হেসে):
তারা বুঝি তোমার প্রশ্নে ভয় পায়?

রাশেদ:
তারা ভয় পায়, কারণ তারা সত্য জানে না।
আর যারা জানে, তারা সত্য চাপা দেয়।

নাহিদা:
তোমার ভিডিও বন্ধ করে দিয়েছে। চ্যানেল চলে গেছে।

রাশেদ (শান্তভাবে):
চ্যানেল যেতে পারে।
কিন্তু যাদের ভেতরে আলো জেগেছে, তাদের মন বন্ধ করা যাবে না।

নাহিদা:
তারা বলছে তুমি ধর্মের শত্রু।

রাশেদ (চোখ সরিয়ে):
আমি ধর্মের শত্রু না, অন্ধতার শত্রু।

(একটু চুপচাপ। বাইরে বজ্রপাতের শব্দ হয়। নাহিদা ধীরে বলে)

নাহিদা:
ভাই, আমি ছোটবেলা থেকে দেখেছি—তুমি শুধু জানতে চাও।
তুমি কাউকে কষ্ট দিতে চাওনি।
কিন্তু এখন সবাই তোমায় ঘৃণা করছে।

রাশেদ:
সত্যের পথটা এমনই হয়।
সবার প্রশংসা পেলে বুঝবি—তুই কোথাও সত্য থেকে সরে যাচ্ছিস।

নাহিদা:
তুমি কি একা বোধ করো?

রাশেদ:
চিন্তার মধ্যে যারা থাকে, তারা কখনো একা না।
তারা নিজেকেই প্রশ্ন করে, নিজেকেই জবাব দেয়।

(হঠাৎ কনস্টেবল হাবিব ঢুকে পড়ে)

কনস্টেবল হাবিব:
সময় শেষ। বের হোন।

নাহিদা:
আপনার ধর্ম যদি সত্য হয়, তাহলে একটুখানি কথাও কেন সহ্য হয় না?

কনস্টেবল হাবিব:
তুমি বড় মেয়ে। ভাইয়ের মতো কথা বলো না।

নাহিদা (চোখে চোখ রেখে):
ভাইয়ের মতো ভাবলে ভয় পেতে হবে বুঝি?

(কনস্টেবল হাবিব কিছু না বলে চলে যায়। নাহিদা ভাইয়ের হাত ধরে)

নাহিদা:
ভাইয়া, তুমি একা না।
আমরা অনেকেই আছি, যারা এখনো আওয়াজ তুলিনি।
তোমার কণ্ঠ আমাদের শক্তি।

রাশেদ (চোখে পানি):
তুই আসবি ভাবিনি। ধন্যবাদ, বোন।

(নাহিদা চলে যায়। রাশেদ একা।)

(রাশেদ মনে মনে):
একটি দেখা অনেক সময় এক যুগের সমান হয়ে দাঁড়ায়।
একটি হাত ধরলে মনে হয়—ভয় আর একা নেই।

(পরেরদিন)
দৃশ্য: থানার অফিস কক্ষ। ওসি জহির ডেস্কের পেছনে বসে আছেন, সামনে ফাইলের স্তূপ। বাইরে টপটপ করে বৃষ্টি পড়ছে।
এসআই কামরুজ্জামান এসে দরজায় দাঁড়িয়ে আছে।

এসআই কামরুজ্জামান:
স্যার, রাশেদ হোসেনের বিরুদ্ধে সরকার থেকে চাপ এসেছে। তার ভিডিও বন্ধ করতে বলেছে। কিন্তু সে প্রতিরোধ করছে।

ওসি জহির (হালকা ক্লান্ত স্বরে):
আমি তাকে জোর করে থামাতে পারছি না। সে অনেকের মনে প্রশ্ন জাগাচ্ছে। আমার অফিসে এসে সে দাঁড়িয়ে, বসে, এমন কথা বলে যা আমার ভিতরে নাড়া দেয়।

এসআই:
আপনি কি সত্যিই মনে করেন যে, তার কথাগুলো দেশের জন্য ক্ষতিকর?

ওসি জহির:
আমি শুধু একজন অফিসার।
কিন্তু আমিও মানুষ।
কখনো কখনো মনে হয়, আমরা যা করি তা ঠিক নাও হতে পারে।
তার কথাগুলো আমার মস্তিষ্কেও প্রশ্ন তোলে।

(ওসি চেয়ার থেকে উঠে জানালার দিকে এগিয়ে যান। বাইরে বৃষ্টি ও ঝড়ের শব্দ। সে বাইরে তাকিয়ে, মনোযোগী।)

ওসি জহির (নিজেকে বলছে):
সত্য কি শুধু সরকার অথবা ধর্মীয় ভাবমূর্তির কথা বলা?
নাকি সত্যের খোঁজ হচ্ছে প্রশ্নের মধ্যেই?

(হঠাৎ এসআই কামরুজ্জামান টেবিলের উপর রাখা একটি কাগজ নিয়ে আসে — যেখানে রাশেদের ভিডিওর কয়েকটি বক্তব্য লেখা।)

ওসি জহির (কাগজ হাতে):
সে বলেছে, "যদি সত্য হয়, তাহলে প্রমাণ দাও।"
আমরা কি কখনো সত্য যাচাই করার চেষ্টা করেছি?

এসআই:
স্যার, কিন্তু এই প্রশ্নগুলো অনেকে অপব্যবহার করতে পারে।

ওসি জহির:
অপব্যবহার নয়, সত্যের সন্ধান।
আমাদের দায়িত্ব সত্যের সামনে দাঁড়ানো, সত্যকে দমন করা নয়।

(হঠাৎ দরজায় নক। ওসি দরজা খুলে দেয়। রাশেদ কে পুলিশের অফিসে বসানো হয়েছে।)

ওসি জহির:
রাশেদ, আমি কিছু বলব।
তুমি শুধু একজন অভিযুক্ত নও।
তুমি আমার মনে একটা দ্বন্দ্বের প্রতীক।

রাশেদ (চোখে চোখ রেখে):
আমি আপনার কথা শুনছি।

ওসি জহির:
আমি হয়তো এক অফিসার।
কিন্তু মানব।
তোমার কথা আমার মন ঝঞ্ঝায় ফেলে দিয়েছে।
আমার কি করা উচিত, নিজেই ভাবছি।

রাশেদ (নরম কণ্ঠে):
আপনি যদি নিজেই প্রশ্ন করতে শুরু করেন, তাহলে হয়তো আমরা সত্যের কাছাকাছি যেতে পারব।

ওসি জহির (হাসিমুখে):
হয়তো... হয়তো।
আমরা সবাই মানুষ।

(কয়েকদিন পর)

থানার বাইরে সকাল। লোকজন জড়ো হয়েছে। হাতে প্ল্যাকার্ড, ফাঁকা কাগজে লেখা—“রাশেদের মুক্তি চাই”, “সত্যের পাশে দাঁড়াও”। জনতার মুখে উত্তেজনা, কিন্তু শান্তিপূর্ণ। কিছু তরুণ-তরুণী স্লোগান দিচ্ছে। পুলিশ লাইন দিয়ে তাদের নিয়ন্ত্রণ করছে।

(রাশেদ থানার দরজায় দাঁড়িয়ে আছেন, হাতকড়া খুলে দেওয়া হয়েছে। সে কয়েক মুহূর্ত সবাইকে দেখে। তার চোখে দৃঢ়তা। নাহিদা পাশে আছেন।)

নাহিদা (মৃদু কণ্ঠে):
ভাই, তুমি মুক্তি পেলে এই সংগ্রাম শেষ হবে না।
তুমি শুধু শুরু করেছো।

রাশেদ:
আমি মুক্তির চেয়ে সত্যের পেছনে আছি।
যদি সত্য মুক্তি পায়, তবে আমি মুক্ত।
অথবা সত্যই বেঁচে থাকবে, আমি না।

(জনতা হাত নেড়ে সাড়া দেয়। পুলিশ ওসি জহির চলে আসেন। কিছুক্ষণ সবাইকে দেখে চুপ।)

ওসি জহির:
সত্যের পথে যাওয়া কখনো সহজ নয়।
কিন্তু তা ছাড়া আর কোনো পথ নেই।
আজ থেকে আমরা দেখব, প্রশ্নের সম্মান দিব।

(রাশেদ এগিয়ে এসে মাইক নিয়ে বলছেন)

রাশেদ:
প্রশ্ন করো, অনুসন্ধান করো, চিন্তা করো।
ভয় করো না সঙ্কটে।
কারণ প্রশ্নের শেষ নেই,
আর সত্য কখনো হারায় না।

(জনতা জোরালো হাততালি দেয়।)

নেপথ্য কণ্ঠ:
একটা প্রশ্ন কখনো মরে না।
একটা সত্য কখনো থেমে থাকে না।
একটা ভয়হীন কণ্ঠ, হাজারো বন্ধ মুখ খুলে দেয়।
সত্যের জয়শোভায় পৃথিবী জুড়ে নতুন আলো জ্বলে ওঠে।

(আপনার মূল্যবান মন্তব্য কমেন্ট বক্সে জানান)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন