পড়ার আগে ভিডিওটি দেখে নিন
অধ্যায় ১: ভূমিকা – গরু বনাম বলি: একটি দ্বৈত মানসিকতা
হিন্দু ধর্মে গরু একটি পবিত্র প্রাণী হিসেবে গণ্য। এর দুধ, মূত্র ও গোবরকে পর্যন্ত অলৌকিক গুণে গুণান্বিত মনে করা হয়। তাই যখন কেউ গোহত্যা করে, তখন অনেক হিন্দু গোঁড়ামি, প্রতিবাদ, এমনকি সহিংসতাও দেখায়। কিন্তু প্রশ্ন হলো—এই উচ্চকণ্ঠস্বর কি সর্বজনীন নৈতিকতার ভিত্তিতে, নাকি এটি কেবল তাদের নিজের ধর্মীয় পরিচয়ের নিরাপত্তার জন্য?
সেই হিন্দুরাই, যারা গরুর জন্য চোখে জল ফেলেন, প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ ছাগল, ভেড়া, মহিষ, এমনকি কচ্ছপ পর্যন্ত বলি দেন ধর্মীয় আচার হিসেবে। দুর্গাপূজা ও কালীপূজায় বলি একটি প্রাচীন প্রথা হলেও আজও তার বাস্তবতা নৃশংস ও রক্তাক্ত। এই বলিগুলো কি প্রাণীর প্রতি দয়ার পরিচয় দেয়? নাকি এটি এক সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত নিষ্ঠুরতা, যা ধর্মের নামে বৈধতা পায়?
অধ্যায় ২: ধর্মীয় বলির ইতিহাস – বৈদিক যুগ থেকে বর্তমান
ধর্মীয় বলির ইতিহাস কোনো একক ধর্ম বা সম্প্রদায়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। তবে হিন্দুধর্মের প্রাচীন গ্রন্থ ও আচার-অনুষ্ঠানে বলির যে দিকটি প্রতিভাত হয়, তা বিশেষভাবে গভীর ও রক্তাক্ত। বিশেষ করে বৈদিক যুগ থেকে শুরু করে বর্তমান তান্ত্রিক প্রথা পর্যন্ত বলির একটা সুসংহত ধারাবাহিকতা রয়েছে।
বৈদিক যুগে পশুবলি
ঋগ্বেদ, যজুর্বেদ, ও সামবেদে বিভিন্ন যজ্ঞ ও হোমে পশুবলির উল্লেখ রয়েছে। বিশেষ করে "অশ্বমেধ", "গোবলি", "নরমেধ" ইত্যাদি যজ্ঞে বলি দেওয়া হতো ঈশ্বরকে তুষ্ট করার জন্য। যজুর্বেদ (Book 23) বলছে:
> “বৃহৎ যজ্ঞে গরু, ছাগল, মহিষ বলি দিয়ে দেবতাদের সন্তুষ্ট করো।”
গরুর বলিও বৈদিক যুগে প্রচলিত ছিল, যদিও পরে হিন্দু সংস্কৃতির কিছু ধারা এটিকে প্রতীকী ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করে। তবে ঐতিহাসিক পণ্ডিতগণ (যেমন: ডঃ দীননাথ ভাণ্ডারকর, রোমিলা থাপার) একমত যে গরু কেবল পূজ্য নয়, প্রাচীন ভারতে খাদ্য হিসেবেও ব্যবহৃত হতো।
পুরাণ ও তান্ত্রিক প্রথায় বলি
পুরাণসমূহ, বিশেষত দেবীপুরাণ, কালিকাপুরাণ এবং মার্কণ্ডেয় পুরাণে বলির বিশদ বিবরণ পাওয়া যায়। কালিকাপুরাণে বলা হয়েছে:
> “দেবী কালীকে সন্তুষ্ট করতে হলে প্রতিদিন বলি দিতে হবে। বলির রক্ত পান করে দেবী প্রসন্ন হন।”
এই বলির মধ্যে ছাগল, মহিষ, হাঁস, এমনকি মানুষও ছিল কোনো কোনো ক্ষেত্রে। তান্ত্রিক সাধনায়, বিশেষ করে কামাখ্যা মন্দিরে, বলি আজও নিয়মিত ঘটছে।
সমকালীন বলির বাস্তবতা
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ও নেপালে বহু হিন্দু মন্দিরে আজও প্রতি বছর লক্ষাধিক পশু বলি হয়। সবচেয়ে বড় উদাহরণ হলো গাধিমাই মেলা (নেপাল), যেখানে একদিনে ৫ লক্ষাধিক পশু বলি দেওয়া হয়, হিন্দু দেবী গাধিমাইকে সন্তুষ্ট করার জন্য।
এদিকে ভারতের বিভিন্ন অংশে, বিশেষ করে গুজরাট ও উত্তর প্রদেশে, গরু হত্যার অভিযোগে মুসলিমদের ওপর পিটিয়ে হত্যার মতো ঘটনা ঘটছে। প্রশ্ন হলো—গরু পবিত্র, কিন্তু ছাগল নয়? মহিষ নয়? কিংবা দেবীর নামে মহিষ বলি দিলে কেন ধর্ম, আর গরু জবাই করলে কেন অপরাধ?
অধ্যায় ৩: হিন্দু ধর্মে পশুবলি – পুরাণ ও প্রথার বর্ণনা
পশুবলি হিন্দু ধর্মে কেবল ঐতিহাসিক নয়, বরং প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের অংশ হয়ে উঠেছে। পুরাণ, তন্ত্র ও আঞ্চলিক ধর্মচর্চায় বলি কেবল "প্রথা" নয়—তা একটি ধর্মীয় কর্তব্য বলে বিবেচিত হয়। অথচ এই প্রথাই আবার অনেক হিন্দুর কাছে "অন্য ধর্মে পশু হত্যা" নিয়ে সমালোচনার ভিত্তিতে দ্বিচারিতার প্রমাণ বহন করে।
১. কালীপূজায় বলি
কালী দেবীকে রক্তপিপাসু দেবী হিসেবে চিত্রিত করা হয় অনেক তন্ত্রশাস্ত্রে। তাঁর পূজায় ছাগল বলি দেওয়ার রীতি বহু পুরোনো। দক্ষিণেশ্বর, তারাপীঠ, কালীঘাট – এই বিখ্যাত মন্দিরগুলোতেও বলি ছিল প্রচলিত, যদিও আজকাল কিছু স্থানে তা প্রতীকী বা প্রতিস্থাপনযোগ্য পদ্ধতিতে করা হয়।
📚 তথ্যসূত্র:
Kalika Purana, Chapter 67-68: “দেবী বলির রক্ত পান করে সন্তুষ্ট হন।”
Banerjee, S.C., The Tantric Way: Art, Science, Ritual, University of Delhi, 1978.
২. দুর্গাপূজায় মহিষ বলি
দুর্গাপূজার মূখ্য কাহিনী – “মহিষাসুর বধ” – থেকেই বলি রীতি আসে। একসময় দুর্গাপূজায় মহিষ বলি দেওয়া হতো “অশুভ শক্তির” প্রতীক হিসেবে। আজও অনেক গ্রামীণ অঞ্চলে তা চালু আছে।
📚 তথ্যসূত্র:
Devi Mahatmya, Markandeya Purana, Chapters 81–93.
Ghurye, G.S., Religions of India, Popular Prakashan, 1980.
৩. তন্ত্রধর্ম ও কামাখ্যা মন্দির
অসমের কামাখ্যা মন্দির হলো পশুবলির অন্যতম কেন্দ্র। এখানে বছরে হাজার হাজার ছাগল, হাঁস ও পায়রা বলি দেওয়া হয়। কামাখ্যা দেবীকে তুষ্ট করার জন্য তন্ত্রমতে রক্ত অপরিহার্য বলে ধরা হয়।
📚 তথ্যসূত্র:
Urban, Hugh B., Songs of Ecstasy: Tantric and Devotional Songs from Colonial Bengal, Oxford University Press, 2001.
Nath, D., Religion and Society in North East India, DVS Publishers, 2013.
সাধারণ গ্রামীণ বলি প্রথা
গ্রামবাংলা, ঝাড়খণ্ড, ছত্তিশগড়, ওড়িশা, বিহার অঞ্চলে বিশেষত “গ্রামদেবতা” বা “লোকদেবতার” পূজায় ছাগল, হাঁস, পাঁঠা, এমনকি মাঝে মাঝে মহিষ বলি দেওয়া হয়। এটি হিন্দু লোকধর্মের অংশ হিসেবে টিকে আছে।
📚 তথ্যসূত্র:
Roy, Sarat Chandra, The Religion and Customs of the Mundas, Asia Publishing House, 1957.
Verrier Elwin, The Tribal World of Verrier Elwin, Oxford University Press, 1964
অধ্যায় ৪: কালীপূজা, দুর্গাপূজা ও বলির নিষ্ঠুরতা – চিত্র ও প্রতিবেদন বিশ্লেষণ
প্রতিবছর পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, আসাম, ও ওড়িশার মতো রাজ্যে লক্ষ লক্ষ হিন্দু কালীপূজা ও দুর্গাপূজায় অংশ নেয়। এসব পূজায় "ভক্তি", "সংস্কৃতি", ও "আস্তিকতা"র মোড়কে যে বলির উৎসব চলে, তা পশুদের জন্য এক নরকযন্ত্রণার রূপ ধারণ করে। যদিও শহুরে কিছু জায়গায় এই বলি রীতি বন্ধ হয়েছে বা প্রতীকী রূপ নেওয়া হয়েছে, কিন্তু গ্রামীণ এলাকাগুলোতে এখনো বলির নিষ্ঠুর বাস্তবতা অক্ষত রয়ে গেছে।
বাস্তব চিত্র: আপনার দেওয়া ভিডিও বিশ্লেষণ
আপনার প্রদত্ত ভিডিওটি বিশ্লেষণে দেখা যায়—
এক পাঁঠার মুখ শক্ত করে ধরে রাখা হয়েছে।
দেবীর সামনে সেটিকে শুইয়ে দেওয়া হয়।
ধারালো অস্ত্র দিয়ে এক আঘাতে শিরচ্ছেদ।
রক্ত ছুটে এসে মাটিতে, দেবীমূর্তির সামনে ছিটকে পড়ে।
এই রকম বলি অনুষ্ঠান প্রতিদিন ঘটে চলেছে পশ্চিমবঙ্গের বহু মণ্ডপে। লোকজন এটিকে “ধর্মীয় উৎসাহে” উদযাপন করলেও, বাস্তবে এটি এক নিখাদ নিষ্ঠুরতা।
📚 ভিডিও রেফারেন্স:
User-submitted footage (MOV_17494372098201993.mp4), presumed location: rural Bengal, ritual context: Kali Puja.
সংবাদ প্রতিবেদন ও জরিপ
Times of India (2019) রিপোর্ট করেছিল, শুধু কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতেই কালীপূজায় প্রায় ১৫ হাজার পশু বলি হয়।
India Today (2020) প্রকাশ করে, কামাখ্যা মন্দিরে বলি নিয়ে পশু অধিকার সংস্থাগুলো প্রতিবাদ জানালেও স্থানীয় প্রশাসন "ধর্মীয় স্বাধীনতা"র দোহাই দিয়ে নীরব থাকে।
📚 তথ্যসূত্র:
“15,000 goats sacrificed in Bengal during Kali Puja”, Times of India, Nov 2019.
“Animal activists protest against sacrifice at Kamakhya”, India Today, Oct 2020.
পশু অধিকার সংস্থার প্রতিবাদ
PETA India, People for Animals, এবং FIAPO দীর্ঘদিন ধরে হিন্দু ধর্মের বলি প্রথা নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে আসছে। তাদের বক্তব্য:
> “ধর্মীয় স্বাধীনতা মানে এই নয় যে, অন্য প্রাণীর জীবন নৃশংসভাবে কেড়ে নেওয়া যাবে। বলি প্রথা এক প্রাচীন নৃশংসতা যার সময় শেষ।”
📚 তথ্যসূত্র:
PETA India Campaign Brief, 2021.
FIAPO Reports on Religious Animal Sacrifice in India, 2022.
দ্বিচারিতা: একদিকে গরু পবিত্র, অন্যদিকে বলির ছাগল?
সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো—যেখানে গোহত্যা নিয়ে এত আক্রোশ, যেখানে হিন্দু গোরক্ষা কর্মীরা পিটিয়ে মানুষ খুন করতে পারেন, সেখানে নিজ ধর্মে পশু বলির রক্তের বন্যা নিয়ে এত নীরবতা কেন? ছাগল, মহিষ, হাঁস, বা কবুতর কি "কম পবিত্র"? নাকি এ দ্বিচারিতা শুধু ক্ষমতার রাজনৈতিক ভাষ্য?
অধ্যায় ৫: গোহত্যার বিরুদ্ধে আন্দোলন – গোরক্ষার রাজনৈতিক রূপ
ভারতের হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির একটি প্রধান প্রতীক হয়ে উঠেছে গরু। "গোরক্ষা" শব্দটি আজ শুধুই ধর্মীয় অনুশাসনের অংশ নয়, বরং এটি একটি রাজনৈতিক অস্ত্র, যা দিয়ে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে হিংসা ছড়ানো হচ্ছে এবং ধর্মীয় আবেগকে উস্কে দিয়ে ভোটব্যাংককে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। অথচ একই সময়, সেই হিন্দু সমাজে বলির নামে বহু প্রাণীকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হচ্ছে – যার বিরুদ্ধে কোনো আওয়াজ নেই।
গরু: পবিত্রতা নাকি রাজনীতির প্রতীক?
হিন্দু ধর্মে গরুকে "গোমাতা" হিসেবে পূজিত করা হয়। গরুর দুধ, মূত্র, গোবর—সবই পূজার উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অথচ এই পবিত্রতার ধারণাটি ধর্মের চেয়ে বেশি রাজনৈতিক ছদ্মবেশ হয়ে উঠেছে। উদাহরণ:
গরু জবাইয়ের গুজবে মুসলিমদের গণপিটুনি (গোরক্ষক দলদের হাতে)।
উত্তর প্রদেশ, গুজরাট, ঝাড়খণ্ডে মুসলিম কসাইদের বিরুদ্ধে ভুয়া মামলা।
কসাইখানায় হানা দেওয়া, হিন্দু এলাকায় মুসলিমদের ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া।
📚 তথ্যসূত্র:
Jha, D.N., The Myth of the Holy Cow, Verso Books, 2002.
Scroll.in: “Cow Vigilantism: How Hindutva Politics Weaponised the Cow”, 2019.
গো-হত্যা নিয়ে হিংসার ঘটনাসমূহ
ভারতে বিগত দশকে বহু মুসলিম ব্যক্তি কেবল গরুর গোশত বহনের সন্দেহে পিটিয়ে মারা হয়েছেন। কয়েকটি ঘটনা:
1. মো. আকলাখ (২০১৫) – দাদরি, উত্তরপ্রদেশ: বাড়িতে গরুর মাংস রাখার সন্দেহে তাকে ঘর থেকে টেনে বের করে হত্যা করা হয়।
2. পেহলু খান (২০১৭) – রাজস্থানে গো-পরিবহণ করছিলেন বৈধভাবে, তাকে প্রকাশ্যে মারধর করে হত্যা করা হয়।
3. রাখবর খান (২০১৮) – গরু নিয়ে যাওয়ার সময় ধরে পিটিয়ে খুন।
📚 তথ্যসূত্র:
BBC News, “India: Muslim man killed over cow meat rumours”, 2015.
The Wire, “Timeline of Mob Lynching in the Name of Cow”, 2014–2021.
Human Rights Watch, “Violent Cow Protection in India”, 2019.
একপেশে রোষ, একপেশে নীরবতা
এই হিংসা সংঘটিত হয় "গোরক্ষার" নামে, অথচ সেই একই সমাজে:
কালীপূজায় ছাগল বলি বৈধ
কামাখ্যা মন্দিরে রক্ত ছিটে পড়ে মন্দিরের মেঝেতে
দুর্গাপূজায় “অশুভ শক্তি নিধনের” নামে মহিষ বলি
কোথাও কোনো প্রতিবাদ নেই, কোনো "পশুপ্রেমিক" হিন্দু রাস্তায় নামে না। কারণ এসব "নিজের ধর্মের" অংশ। তাই সেখানে বলির রক্ত ধর্ম, গরুর রক্ত অপরাধ—এ এক সুস্পষ্ট দ্বিচারিতা।
হিন্দুত্ববাদী গোরক্ষা আন্দোলনের মুখোশ
“গোরক্ষা” একপ্রকার রাজনৈতিক ধর্মচর্চা, যার মূল উদ্দেশ্য:
মুসলিম বিরোধিতা
নিচু জাতি ও পশু ব্যবসায়ী শ্রেণিকে দমন
‘ধর্মীয় আবেগ’ জাগিয়ে রাজনৈতিক মেরুকরণ
📚 তথ্যসূত্র:
Anand Teltumbde, Republic of Caste, Navayana Publishing, 2018.
Christophe Jaffrelot, Hindu Nationalism: A Reader, Princeton University Press, 2007.
অধ্যায় ৬: গোহত্যার নামে সহিংসতা বনাম নিজের ধর্মীয় বলি প্রথা
হিন্দুত্ববাদী চেতনায় গোহত্যা মানেই পাপ, আর সেই পাপের জন্য মুসলিমদের প্রাণ নেওয়া যায়—এই মতাদর্শ আজ ভারতে প্রতিষ্ঠিত। অথচ একই সময় হিন্দু ধর্মে বলির নামে পশুহত্যা একটি ধর্মীয় কর্তব্য হিসেবে রয়ে গেছে। এই অধ্যায়ে আমরা বিশ্লেষণ করব—এই দ্বিচারিতার প্রাকৃতিক, ধর্মীয় ও সামাজিক চরিত্র কীভাবে একটি সাম্প্রদায়িক সহিংসতা জন্ম দিয়েছে।
---
গোহত্যা: হিন্দু চেতনায় অপরাধ
ভারতের বহু রাজ্যে গোহত্যা আইনত নিষিদ্ধ। অথচ সেই আইনই ব্যবহার করা হচ্ছে মুসলিমদের টার্গেট করতে, এমনকি মিথ্যা অভিযোগে নিরীহ মানুষদের হত্যা করতে। কোনো প্রমাণ ছাড়াই:
বাড়িতে মাংস রাখলেই সন্দেহ: গরুর?
রাস্তায় মাংস বিক্রি করলেই সন্দেহ: গরুর?
গরু ট্রাকে করে নেওয়া মানেই: জবাই করার উদ্দেশ্য?
📚 তথ্যসূত্র:
Amnesty India Report, “Cow-Related Hate Crimes: Pattern of Targeted Lynchings”, 2021.
The Print: “Cow slaughter laws used as pretext for vigilante violence”, 2022.
নিজের ধর্মীয় বলি: স্বীকৃত এবং উৎসবমুখর
একই হিন্দু সমাজেই প্রতি বছর লাখ লাখ ছাগল, পাঁঠা, হাঁস, কবুতর, এমনকি মহিষ বলি দেওয়া হয় দেবতার নামে। এই বলি—
মন্দিরে হয়: দেবতা খুশি হন।
রক্ত ছিটায়: পবিত্রতা ছড়ায়!
পশুর চিৎকার: শিবরাত্রি বা কালীপূজার আবহ!
যেখানে একজন মুসলিম কসাই গরু জবাই করলেই হয় খুন, সেখানে একই পাড়া-মহল্লার হিন্দুরা ছাগল বলি দিচ্ছে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে।
📚 তথ্যসূত্র:
Field Report on Kali Puja Sacrifices in Bengal, People for Animals, 2022.
“Hindu animal sacrifices continue in the 21st century”, LiveMint, Oct 2021.
ধর্মের নামে সহিংসতা বনাম ধর্মের নামে নীরবতা
এই দ্বিচারিতা শুধু সামাজিক নয়, নীতিগতভাবে ধর্মীয় অসততার প্রকাশ। উদাহরণ:
ধর্মীয় আচার প্রতিক্রিয়া
মুসলিম কোরবানি "বর্বরতা", "অসভ্যতা", "অপরাধ"
হিন্দু বলি "পূজা", "শ্রদ্ধা", "ঐতিহ্য"
এই বিপরীত প্রতিক্রিয়াই ভারতীয় সমাজে সাম্প্রদায়িক ঘৃণার সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দিক—যেখানে ন্যায়-অন্যায়ের মাপকাঠি ধর্মনির্ভর।
হিপোক্রিসি (দ্বিচারিতা): ধর্মীয় নৈতিকতার পতন
একজন হিন্দু গোরক্ষা কর্মী হয়তো গোহত্যা বন্ধে রাস্তা আটকে, মুসলিম দোকানে ভাঙচুর করছে। কিন্তু সেই একই ব্যক্তি হয়তো বছরের শেষে তার নিজের পাড়ার কালীমূর্তির সামনে একটি ছাগলের শিরচ্ছেদে অজ্ঞান হয়ে উল্লাস করছে।
এই দ্বিচারিতা গোরক্ষা আন্দোলনকে করে তোলে একটি ধর্মীয় নৈতিকতা নয়, বরং ক্ষমতাবান সংখ্যাগোষ্ঠীর আধিপত্য প্রদর্শনের অস্ত্র।
📚 তথ্যসূত্র:
Romila Thapar, Cultural Pasts: Essays in Early Indian History, Oxford University Press, 2003.
Arundhati Roy, Azadi: Freedom. Fascism. Fiction., Haymarket Books, 2020.