![]() |
১. ইসলামের আবির্ভাবের সময় দাসপ্রথার অবস্থা
● আরব সমাজে দাসপ্রথা ছিল স্বাভাবিক ও গৃহীত একটি প্রথা
ইসলাম আবির্ভাবের সময়, অর্থাৎ ৭ম শতকের আরব সমাজে দাসপ্রথা ছিল অত্যন্ত প্রচলিত এবং সামাজিকভাবে পুরোপুরি গ্রহণযোগ্য। দাসরা তখন শুধুমাত্র শ্রমিকই ছিল না, বরং তাদেরকে পণ্য, যৌনদাসী, ও যুদ্ধের লুট হিসেবে ব্যবহার করা হতো। এই সমাজে দাসপ্রথা ছিল সামাজিক শ্রেণিবিন্যাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
● কীভাবে মানুষ দাস হতো?
দাস হওয়ার প্রধান কয়েকটি উপায় ছিল:
*যুদ্ধবন্দী হিসেবে ধরা পড়ে দাসে পরিণত হওয়া
*ঋণের কারণে আত্মসমর্পণ করা ও দাসত্ব গ্রহণ করা
*দাস-শিশু জন্মের মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মের দাস হয়ে ওঠা
*দাস কেনাবেচার বাজার থেকে মানুষকে ক্রয় করা
*দলছুট যাযাবর বা দুর্বল গোষ্ঠীর উপর আক্রমণ চালিয়ে ধরে আনা
● মক্কা ও মদিনার দাসনীতি
মক্কা ছিল বাণিজ্যনির্ভর শহর, যেখানে ধনী কুরাইশ বংশভুক্তরা অনেক দাস পোষণ করত। এই দাসরা তাদের জন্য ঘরবাড়ি পরিষ্কার, কৃষিকাজ, উট-ঘোড়া লালন, ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করত। কিছু ধনী ব্যক্তি দাসদের দিয়ে লড়াই বা যুদ্ধে অংশগ্রহণও করাত।
মদিনায়ও একই রকম অবস্থা ছিল, যদিও দাসদের সঙ্গে কিছুটা "মানবিক" আচরণ দেখা যেত—তবুও তারা মালিকের সম্পত্তি হিসেবেই বিবেচিত হতো।
● যৌনদাসীত্ব: একটি প্রচলিত দিক
দাসপ্রথার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল যৌনদাসত্ব। ধনী ব্যক্তিরা নারীদাসীদেরকে কেবল শ্রমের জন্য নয়, যৌন তৃপ্তির উপকরণ হিসেবেও ব্যবহার করত। এই নারীদাসীরা মালিকের অনুমতি ছাড়া কারও সঙ্গে বিবাহ করতে পারত না, এবং সন্তান জন্মালেও তারা দাসের সন্তান হিসেবেই পরিগণিত হতো, যদিও কিছু ক্ষেত্রে মালিক ইচ্ছা করলে তাদের মুক্তিও দিতে পারত।
● আরব দাসবাজার: একটি কাঠামোগত প্রতিষ্ঠান
আরবে দাস কেনাবেচার জন্য বিশেষ বাজার ছিল, যেমন—সুক উকাজ (Souq Ukaz)। এই বাজারগুলোতে আফ্রিকান, তুর্কি, পারস্য ও ভারতীয় দাসদেরও বেচাকেনা হতো। ব্যবসায়ীরা দাসদেরকে দূরবর্তী অঞ্চল থেকে ধরে এনে এই বাজারে বিক্রি করত।
● দাসপ্রথা ছিল একধরনের "অর্থনৈতিক সম্পদ"
দাসদের ব্যবহার করা হতো সম্পদ বৃদ্ধির মাধ্যম হিসেবে। একজন মালিক যত বেশি দাস রাখতেন, তার সামাজিক মর্যাদা তত বাড়ত। এমনকি উত্তরাধিকারসূত্রেও দাস হস্তান্তর হতো। দাস ছিল একপ্রকার বিনিয়োগ, যাকে দিয়ে শ্রম, যৌনতা ও যুদ্ধের মতো বহু কাজ করানো হতো বিনা মূল্যে।
২. কুরআনে দাসপ্রথা: কী বলা হয়েছে?
● কুরআন দাসপ্রথা নিষিদ্ধ করেনি
প্রথমে একটি মৌলিক সত্য: কুরআনের কোথাও দাসপ্রথা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়নি। বরং দাসপ্রথাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে এবং দাসদের ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত নিয়মনীতি তৈরি করা হয়েছে। অর্থাৎ, কুরআন দাসপ্রথাকে একটি বাস্তবতা হিসেবে মেনে নিয়েছে, কিন্তু একে বিলুপ্ত করার কোনো সরাসরি আদেশ দেয়নি।
● দাস মালিকানার অনুমোদন
কুরআনে “ملك اليمين” (মালিকানাধীন ডান হাতের অধিকারভুক্ত) শব্দটি বহুবার এসেছে, যার দ্বারা সাধারণত বোঝানো হয়—যুদ্ধবন্দী নারী, যারা মালিকের যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারত। নিচে কিছু উদাহরণ দেওয়া হলো:
সূরা নিসা ৪:৩
“...আর তোমাদের ডান হাত যাদের মালিক হয়েছে, তাদের নিয়ে সন্তুষ্ট থাকো...”
সূরা মুমিনুন ২৩:৫-৬
“...যারা নিজেদের যৌনাঙ্গ সংযত রাখে, তাদের স্ত্রীরা অথবা তাদের ডান হাতের অধিকারভুক্ত নারী ছাড়া...”
সূরা মাআরিজ ৭০:২৯-৩০
“…শুধু তাদের স্ত্রী এবং ডান হাত যাদের অধিকারী হয়েছে, তাদের সাথে সহবাসের জন্য তারা নিন্দিত নয়।”
এগুলো থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে কুরআন যৌনদাসীত্বকে বৈধতা দেয় এবং দাস মালিকানা একটি স্বাভাবিক অধিকার হিসেবে দেখানো হয়েছে।
● দাস মুক্ত করার অনুপ্রেরণা বা নির্দেশ
কুরআনে কখনো কখনো দাস মুক্ত করার কথা এসেছে, কিন্তু সেটি শর্তসাপেক্ষ বা প্রায়শ্চিত্তমূলক হিসেবে। উদাহরণস্বরূপ:
*সূরা নিসা ৪:৯২ – যদি কেউ ভুল করে একজন মুসলিমকে হত্যা করে, তবে তার এক শাস্তি হলো একজন মুসলিম দাসকে মুক্ত করা।
*সূরা মুজাদালা ৫৮:৩ – স্ত্রীর সঙ্গে জিহার করলে (একধরনের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘোষণা), তা ভাঙার আগে একজন দাস মুক্ত করতে হবে।
এই ধরনের দাস মুক্তির আদেশগুলো মূলত দণ্ড অথবা কাফফারা (প্রায়শ্চিত্ত) হিসেবে আসে, সরাসরি দাসপ্রথা বিলুপ্ত করার নির্দেশ নয়।
● দাসদের প্রতি সদ্ব্যবহারের নির্দেশ
কুরআন দাসদের প্রতি সদ্ব্যবহারের পরামর্শ দেয়:
*সূরা নাহল ১৬:৭১ – আল্লাহ বলেন, “...তোমরা যাদের মালিক, তাদেরকে তোমাদের ধনসম্পদে অংশীদার করো না...”
*সূরা আন-নূর ২৪:৩৩ – যদি কোনো দাস মুক্তি চায় এবং সে মুক্তির চুক্তি করতে চায়, তাহলে মালিককে চুক্তি করতে বলা হয়েছে।
তবে এইসব আয়াতে দাসপ্রথার প্রতি নৈতিক সমালোচনা নেই, বরং প্রথাটি বজায় রেখেই কিছু নরম নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
● দাসদের কাছ থেকে যৌনতা ছাড়া কোনো “স্বাধীনতা” দাবি করার সুযোগ নেই
যেহেতু কুরআন নিজেই বলে দিয়েছে “ডান হাত যাদের অধিকার করেছে” – তাদের সঙ্গে সহবাস বৈধ, তাই দাসীর সম্মতি বা পছন্দের কোনো প্রশ্নই উঠে না। এটা আধুনিক মানবাধিকার ভাবনার সঙ্গে বিপরীত।
* কুরআন দাসপ্রথা স্বীকৃত করেছে।
*দাসমুক্তি ছিল অপরাধের কাফফারা হিসেবে, উৎসাহমূলক বা সামাজিক নীতির অংশ নয়।
*যৌনদাসীত্বকে অনুমোদন করা হয়েছে — যা আধুনিক দৃষ্টিকোণ থেকে নৈতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য।
৩. মুহাম্মদ ও দাসপ্রথা
● মুহাম্মদের নিজের বহু দাস ছিল
ইসলামের প্রবর্তক মুহাম্মদের নিজেরও একাধিক দাস ও দাসী ছিল, যাদের মধ্যে অনেকে তার মৃত্যুর সময় পর্যন্ত দাস অবস্থায়ই ছিলেন। ঐতিহাসিক সূত্র মতে, তিনি দাস কিনেছেন, দান হিসেবে গ্রহণ করেছেন, আবার কখনো কখনো দানও করেছেন। কিছু দাসকে মুক্তি দিলেও অনেককে জীবনের শেষ পর্যন্ত দাস হিসেবে রেখেছেন।
বিশেষ কিছু দাসদের নাম:
*বিলাল ইবনে রাবাহ: একজন আফ্রিকান দাস যাকে আবু বকর মুক্ত করেন, পরে তিনি ইসলামের প্রথম মুয়ায্জিন হন।
*যায়দ ইবনে হারিসা: মুহাম্মদের দত্তকপুত্র, যাকে তিনি মুক্তি দেন এবং পুত্রের মতো গ্রহণ করেন।
* সালিম, আনাস, আবু রাফে: আরও কিছু দাস যারা মুহাম্মদের সেবা করতেন।
*মারিয়া আল-কিবতিয়া: একজন কপটিক খ্রিস্টান দাসী, যাকে মিশরের শাসক মুহাম্মদকে উপহার হিসেবে পাঠান।
● যৌনদাসী মারিয়া আল-কিবতিয়া
মারিয়া ছিলেন মুহাম্মদের যৌনদাসী। ঐতিহাসিক বর্ণনা অনুযায়ী, তিনি ছিলেন একজন মিশরীয় খ্রিস্টান নারী, যাকে কপটিক খ্রিস্টান শাসক আল-মুকাওকিস উপহার হিসেবে মুহাম্মদকে পাঠান। মুহাম্মদ তাকে বিয়ে করেননি, বরং যৌনদাসী হিসেবে তার সঙ্গে সহবাস করেন, এবং মারিয়ার গর্ভ থেকে তার ছেলে ইব্রাহিম জন্ম নেয়।
মারিয়াকে কখনো মুক্তি দেওয়া হয়েছে—এমন কোনো নির্ভরযোগ্য ঐতিহাসিক তথ্য নেই। অনেক ইতিহাসবিদ উল্লেখ করেন, তিনি মৃত্যুর আগপর্যন্ত মুহাম্মদের অধীনেই ছিলেন।
● মুহাম্মদের দাস কেনা, বিক্রি ও উপহার দেওয়া
*দাস কেনা: হাদিসে আছে, মুহাম্মদ নিজে দাস কিনেছেন। যেমন, একাধিক হাদিসে তিনি দাস ক্রয় করে অন্যকে দিয়েছেন।
*দাস বিক্রি/দান: সিহাহ সিত্তার হাদিসে দেখা যায়, মুহাম্মদ তার সাহাবিদের মাঝে দাস বিলি করেছেন (যেমন যুদ্ধলব্ধ নারীদের)।
যুদ্ধবন্দী নারীদের দাসীতে পরিণত করা: মুহাম্মদ বহু যুদ্ধের পর বন্দী নারীদের দাসী বানান। যেমন: খায়বার যুদ্ধের পর তিনি সাফিয়া বিনতে হুয়াইকে বন্দী করেন এবং পরে তাকে স্ত্রী হিসেবে নেন। আবার অনেক নারী কেবল যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
● মুহাম্মদ দাসপ্রথা বিলুপ্ত করেননি
মুহাম্মদ কেবল দাসমুক্তিকে “পুণ্যের কাজ” হিসেবে তুলে ধরেছেন, কিন্তু একবারের জন্যও দাসপ্রথা নিষিদ্ধ করেননি। বরং যুদ্ধ ও ধর্মীয় বিধানের মাধ্যমে দাসপ্রথাকে নতুন মাত্রা দিয়েছেন। যুদ্ধের সময় “যুদ্ধবন্দী নারী” দাসীতে পরিণত হওয়া ইসলামী শরীয়তের অংশ হয়ে দাঁড়ায়।
* মুহাম্মদ দাসপ্রথা পুরোপুরি বজায় রেখেছিলেন এবং এটিকে ইসলামিক আইনে প্রতিষ্ঠিত করেন।
*তার নিজের যৌনদাসী ছিল এবং দাসদানের মাধ্যমে তিনি এই প্রথাকে উৎসাহ দিয়েছেন।
কোনো পর্যায়ে তিনি দাসপ্রথা বিলুপ্ত করার কথা বলেননি।
৪. হাদিসে দাস ও দাসীদের নিয়ে বর্ণনা
● দাস ও দাসীদের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করতে হবে – কিছু নরম পরামর্শ
হাদিসে কিছু জায়গায় দাসদের প্রতি সদয় হওয়ার উপদেশ আছে। উদাহরণ:
-
বুখারি, হাদিস 30
“তোমাদের দাসেরা তোমাদের ভাই। আল্লাহ তাদের তোমাদের অধীনে দিয়েছেন। তাই যার অধীনে দাস আছে, সে যেন তাদের খাওয়ায় যা সে নিজে খায়, পরায় যা সে নিজে পরে।” -
তিরমিজি, হাদিস 1944
“তোমাদের দাসদের ভাই মনে করো। যদি কেউ তার দাসকে প্রহার করে বা গাল দেয়, তবে সে যেন তার কাফফারা দেয় – তাকে মুক্ত করে।”
🔹 বিশ্লেষণ: এসব হাদিস নৈতিক পরামর্শ দেয়, কিন্তু দাসপ্রথার অস্তিত্ব বা বৈধতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলে না।
● যৌনদাসী বিষয়ক হাদিস
হাদিসে যৌনদাসীদের নিয়ে সরাসরি আলোচনা আছে এবং যৌন সম্পর্ককে বৈধ বলা হয়েছে। উদাহরণ:
-
বুখারি, হাদিস 2229
“আমরা রাসূলের সঙ্গে যুদ্ধ করতাম... যুদ্ধবন্দী নারীদের ধরতাম, কিন্তু তখন আমাদের স্ত্রীদের কাছে না থাকায়, আমরা 'আজল' করতাম (সহবাসের সময় বীর্য নির্গমন না করে বেরিয়ে যাওয়া)। রাসূল জানতে পারলে বললেন, ‘তোমরা যা করছ তা করো, কিন্তু আল্লাহ যদি কারো জন্ম দিতে চায়, তা হবেই।’”
🔹 বিশ্লেষণ: এই হাদিস স্পষ্ট করে যে যৌনদাসীদের সঙ্গে ইসলামে সহবাস বৈধ এবং তা প্র্যাকটিস হিসেবে চলত।
● দাসীর সন্তান ও বৈধতা
-
মুসলিম, হাদিস 1453
“যদি কারো দাসী থেকে সন্তান জন্মায় এবং সে তাকে মুক্ত করে ও বিয়ে করে, তাহলে সে দ্বিগুণ পুরস্কার পাবে।”
🔹 বিশ্লেষণ: দাসীর সঙ্গে সহবাস ও সন্তান জন্ম দেওয়া একেবারে স্বীকৃত এবং বৈধ, যা হাদিস দ্বারা নিশ্চিত।
● দাসদের শাস্তি দেওয়া ও প্রহার
-
বুখারি, হাদিস 2414
“যে ব্যক্তি তার দাসকে প্রহার করল বা চড় মারল, তার কাফফারা হলো তাকে মুক্ত করে দেওয়া।”
🔹 বিশ্লেষণ: দাসকে প্রহার করলে কিছু ক্ষেত্রে দাসমুক্তি দিতে বলা হয়েছে, কিন্তু প্রহার করা যে অনৈতিক, তা বলা হয়নি। বরং একে একটা স্বাভাবিক ঘটনা ধরে নিয়ে কাফফার নিয়ম বলা হয়েছে।
● নারী বন্দীদের ভাগ করে দেওয়ার বিধান
-
বুখারি, হাদিস 371
“হুনাইন যুদ্ধের পরে, রাসূল বন্দী নারীদের সাহাবিদের মধ্যে ভাগ করে দেন।”
🔹 বিশ্লেষণ: যুদ্ধবন্দী নারীদেরকে দাসী বানিয়ে বিতরণ করা হয় – এটি মুহাম্মদের প্রত্যক্ষ আদেশ ও তত্ত্বাবধানে ঘটেছে।
হাদিস দাসপ্রথাকে উৎসাহ না দিলেও তা সম্পূর্ণ বৈধ ও বাস্তব বলে ধরে নিয়েছে।
-
যৌনদাসীত্ব, দাস প্রহার, দাস বণ্টন – সবই হাদিসে স্বীকৃত ও প্রতিষ্ঠিত।
-
দাসপ্রথা বিলুপ্ত করার কোনো নির্দেশ বা নৈতিক অস্বীকৃতি হাদিসে নেই।
৫. সাহাবিদের সময় ও খিলাফতে দাসপ্রথা
● আবু বকর (প্রথম খলিফা)
*আবু বকর দাসমুক্তির জন্য কিছু দাস কিনে তাদের মুক্তি দিয়েছিলেন, যেমন বিলাল ইবনে রাবাহ।
* তবে, তার সময়ও যুদ্ধবন্দীদের দাসী বানানো, দাস কেনাবেচা এবং উপহার দেওয়া চলতে থাকে।
*তিনি কখনোই দাসপ্রথা বিলুপ্ত করার কোনো উদ্যোগ নেননি।
● উমর ইবন খাত্তাব (দ্বিতীয় খলিফা)
*উমর ইসলামী সাম্রাজ্য ব্যাপকভাবে বিস্তার করেন এবং তার শাসনামলে হাজার হাজার যুদ্ধবন্দী নারী ও পুরুষ দাস-দাসীতে পরিণত হয়।
*যুদ্ধবন্দী নারীদের মুসলিম সৈনিকদের মধ্যে বিতরণ করা হয় – এ প্রথা তিনি বজায় রাখেন।
* উমর কিছু দাস-দাসীদের উপর নির্দিষ্ট আচরণবিধি চালু করেন (যেমন নির্দিষ্ট পোশাক), তবে দাসপ্রথা নিষিদ্ধ করেননি।
● উসমান ইবন আফফান (তৃতীয় খলিফা)
*উসমান ছিলেন ধনী ব্যবসায়ী, যার নিজের দাস-দাসী ছিল।
*তার সময়েও দাসপ্রথা অক্ষুণ্ণ ছিল এবং দাস কেনাবেচা প্রচলিত ছিল।
● আলী ইবন আবু তালিব (চতুর্থ খলিফা)
*আলী নিজেও বহু দাস রাখতেন এবং হাদিস অনুসারে তাদের মধ্যে অনেকের নাম পাওয়া যায়।
*তিনি যুদ্ধবন্দীদের দাস বানিয়ে বিতরণ করেন ও দাসদের উত্তরাধিকার সূত্রে রাখেন।
● অন্যান্য সাহাবি ও তাবেঈনের দাসপ্রথা চর্চা
* প্রখ্যাত সাহাবিদের মধ্যে যেমন আবদুল্লাহ ইবনে ওমর, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস, আবু হুরাইরা – প্রত্যেকের ঘরেই এক বা একাধিক দাস-দাসী ছিল।
*তারা দাসদের হাদিস শেখাতেন, আবার দাসদের থেকে হাদিসও বর্ণনা করতেন। এই দাসরাই অনেক সময় পরবর্তীতে ইসলাম প্রচারে ভূমিকা রাখে।
● ইসলামিক যুদ্ধ ও দাস বানানোর ধারা
* রাশিদুন খিলাফতের সময় (৬৩২–৬৬১ খ্রিস্টাব্দ) ইসলামী সেনারা পারস্য, বাইজেন্টাইন এবং মিশর আক্রমণ করে বহু মানুষকে বন্দী করে দাস বানায়।
*যুদ্ধবন্দী নারীদের সেনাদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয় – অনেকেই তাদেরকে যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহার করত।
🔎 সংক্ষেপে বিশ্লেষণ
* রাশিদুন খলিফাগণ কেউই দাসপ্রথার অবসান ঘটানোর কোনো চেষ্টাই করেননি।
* বরং দাসপ্রথা ছিল ইসলামী সাম্রাজ্যের অর্থনৈতিক ও সামরিক ব্যবস্থার অংশ।
* সাহাবিরা দাসপ্রথাকে স্বাভাবিক ও বৈধ বলেই মেনে নিয়েছিলেন।৬. ইসলামী আইন ও ফিকহে দাসপ্রথার বিধান
● চারটি মাজহাব (হানাফি, মালিকি, শাফিঈ, হাম্বলি) – সবাই দাসপ্রথাকে বৈধ বলেছে
ইসলামী শরিয়াহর মূল চারটি মাজহাবই দাসপ্রথাকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং তাদের জন্য আলাদা ফিকহি বিধান তৈরি করেছে। উদাহরণস্বরূপ:
◉ হানাফি মাজহাব:
দাসকে কেনা-বেচা বৈধ।
মালিক চাইলে দাসের সঙ্গে সহবাস করতে পারে।
দাসের নামাজ, রোজা, হজ—সব ইবাদতের উপর কিছুটা শিথিলতা।
◉ মালিকি মাজহাব:
দাসের প্রতি সদাচরণ করতে বলা হলেও মালিকের অধিকার অগ্রাধিকার পায়।
যৌনদাসীকে নিয়ে আলাদা বিধান রয়েছে, তার সন্তান জন্মালে ‘উম্মে ওয়ালাদ’ হিসেবে গণ্য হয়।
◉ শাফিঈ মাজহাব:
দাসের অধিকার এবং মালিকের অধিকার আলাদা করে সংজ্ঞায়িত।
কৃতদাসের (মুকাতাব) মুক্তির চুক্তি বৈধ, তবে বাধ্যতামূলক নয়।
◉ হাম্বলি মাজহাব:
দাস মালিকের সম্পত্তি, তাই বিক্রয়, দান, উত্তরাধিকার – সবকিছুতেই তার স্থান নির্দিষ্ট।
মালিক চাইলে দাসকে শাস্তি দিতে পারে, এমনকি মৃত্যুদণ্ড দিলেও কোনো কিসাস বা বদলা নেই।
● যৌনদাসী ও "উম্মে ওয়ালাদ" এর বিধান
উম্মে ওয়ালাদ মানে সেই দাসী, যার গর্ভে মালিকের সন্তান জন্মেছে।
ইসলামী ফিকহ অনুসারে, উম্মে ওয়ালাদকে বিক্রি করা যায় না। তবে সে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত মালিকের যৌনদাসী হিসেবেই থাকবে।
মালিক মারা গেলে, সে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মুক্তি পাবে।
● দাসের উত্তরাধিকার ও মর্যাদা
দাস নিজে কোনো সম্পত্তির মালিক হতে পারে না।
তার সন্তানও দাস হবে, যদি মা-বাবা দুজনেই দাস হয়।
দাসকে হত্যা করলে দিয়া (রক্তপণ) কম দিতে হয়, কারণ শরিয়াহ অনুযায়ী তার মূল্য কম।
● দাসের সাক্ষ্যগ্রহণ ও সামাজিক মর্যাদা
ইসলামী আদালতে দাসের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয়, বিশেষ করে ফৌজদারি ও পারিবারিক মামলায়।
দাস ও মুক্ত মানুষের মধ্যে বিবাহে সীমাবদ্ধতা রাখা হয়েছে। মুক্ত নারী চাইলে দাসকে বিয়ে করতে পারবে না, যতক্ষণ না দাস সম্পূর্ণভাবে মুক্ত হয়।
ইসলামী ফিকহে দাসপ্রথা শুধুমাত্র বৈধ নয়, বরং তার জন্য বিশদভাবে আইন তৈরি করা হয়েছে।
মালিককে দাসের উপর পরিপূর্ণ অধিকার দেওয়া হয়েছে – শারীরিক, যৌন, সামাজিক ও অর্থনৈতিক।
কোন ফিকহি মাজহাবই দাসপ্রথার নিষেধ বা বিলুপ্তি চায়নি।৭. ইসলামের স্বর্ণযুগ: উমাইয়া ও আব্বাসীয় খিলাফতে দাসপ্রথার বিস্তার
● উমাইয়া খিলাফত (৬৬১–৭৫০ খ্রিস্টাব্দ)
-
উমাইয়াদের শাসনামলে দাসপ্রথা বিস্তৃত ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়।
-
স্পেন থেকে ভারতে — মুসলিম বিজিত এলাকাগুলোতে হাজার হাজার মানুষকে দাস করে আনা হয়।
-
রাজপ্রাসাদ, সেনাবাহিনী, কৃষি ও খনি—সবক্ষেত্রেই দাস ব্যবহার হতো।
-
হরেমে অসংখ্য যৌনদাসী রাখা হতো, যারা বাইজেন্টাইন, ইরানিয়ান, ককেশীয় অঞ্চলের নারীদের মধ্য থেকে আনা হতো।
● আব্বাসীয় খিলাফত (৭৫০–১২৫৮ খ্রিস্টাব্দ)
-
দাসপ্রথা তার সর্বোচ্চ বিকাশে পৌঁছে যায় এই সময়ে।
-
আব্বাসীয়দের প্রাসাদে হাজার হাজার দাস ও দাসী ছিল—অনেকে ছিলেন শৈল্পিক, সাহিত্যিক ও সংগীতজ্ঞ।
-
গায়ক দাসী (কন্যা-মুঘানিয়া) ও শিক্ষিত দাসদের মূল্য ছিল খুব বেশি।
-
গোলাম/মামলুক সৈন্য গঠনের প্রথা শুরু হয়—তুর্কি ও মধ্য এশিয়ার দাসদের প্রশিক্ষণ দিয়ে সেনাবাহিনীতে রাখা হতো।
● বাগদাদের দাসবাজার
-
বাগদাদে বড় বড় দাসবাজার ছিল, যেখানে আফ্রিকা, ইউরোপ ও এশিয়া থেকে আনা দাসদের বিক্রি হতো।
-
শুধু মুসলিম নয়, খ্রিস্টান ও ইহুদি ব্যবসায়ীরাও এই বাজারে জড়িত ছিল। তবে মুসলিম শাসকদের অনুমোদন ছাড়া ব্যবসা সম্ভব ছিল না।
● আফ্রিকা থেকে দাস আমদানি
-
আব্বাসীয়রা পূর্ব আফ্রিকা থেকে কালো আফ্রিকান দাস আনত, যাদের বলা হতো "Zanj"।
-
Zanj দাসদের দ্বারা ইরাকের খেজুর বাগানে ক্রীতদাস শ্রম ব্যবহার হতো। তারা অমানবিক পরিশ্রমে বাধ্য হতো।
● Zanj বিদ্রোহ (৮৬৯–৮৮৩ খ্রিস্টাব্দ)
-
Zanj দাসরা একসময় বিদ্রোহ করে এবং দক্ষিণ ইরাকের একটি বড় অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে নেয়।
-
এটি ছিল বিশ্বের ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ দাসবিদ্রোহ।
-
আব্বাসীয় খিলাফত বহু বছর ধরে এই বিদ্রোহ দমন করতে ব্যর্থ হয়।
● দাসী ও যৌনদাসীর সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে প্রভাব
-
খলিফাদের প্রাসাদে দাসী গায়িকা, কবি ও রসিকতা করা দাসদের (জোকার টাইপ) দ্বারা বিনোদন চলত।
-
কিছু দাসী এতই বিখ্যাত ছিলেন যে তাদের কবিতা ও সংগীত আজও残存 আছে।
-
“একজন যৌনদাসী কেমন হওয়া উচিত” – এ নিয়ে ইসলামি সাহিত্যও ছিল।
🔎 সংক্ষেপে বিশ্লেষণ
-
ইসলামের তথাকথিত “স্বর্ণযুগ” আসলে ছিল দাসপ্রথার স্বর্ণযুগ।
-
ইসলামী সাম্রাজ্যের রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি—সবকিছুতেই দাসপ্রথা ছিল কেন্দ্রীয় একটি শক্তি।
-
ইসলামী খিলাফতের বিস্তার যত বেড়েছে, দাসের সংখ্যা তত বেড়েছে।
৮. ইউরোপীয় উপনিবেশবাদ বনাম ইসলামি দাসপ্রথা: তুলনামূলক বিশ্লেষণ
● ইউরোপীয় উপনিবেশবাদীরা (১৫শ–১৯শ শতক)
ইউরোপীয় উপনিবেশবাদীরা (বিশেষ করে পর্তুগিজ, ব্রিটিশ, ডাচ, স্প্যানিশ ও ফরাসিরা) মূলত ১৫শ শতক থেকে আফ্রিকায় দাস ব্যবসা শুরু করে।
পশ্চিম আফ্রিকা থেকে প্রায় ১.২ কোটিরও বেশি আফ্রিকানকে ধরে নিয়ে আমেরিকা, ইউরোপ ও ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে বিক্রি করা হয়।
এই দাসেরা চিনির খামার, তুলার খামার, খনি, রেল নির্মাণ প্রভৃতিতে অমানবিক শ্রমে ব্যবহৃত হতো।
● ইসলামি দাসপ্রথা ছিল অনেক আগে থেকে
ইসলামি দাসপ্রথা ইউরোপীয়দের আগেই শুরু হয় (৭ম শতাব্দী থেকে)।
ইসলামি সাম্রাজ্যে দাসদের ব্যবহার ছিল নানাধরনের: সেনা, যৌনদাসী, কৃষিকাজ, খনি, প্রাসাদসেবক, শিল্প-সাহিত্য ইত্যাদি।
● যৌনদাসীর ব্যাপারে ইউরোপ বনাম ইসলাম
দিক ইউরোপ ইসলাম আইনগত যৌনদাসী নিষিদ্ধ, লুকিয়ে চলত বৈধ, খোলাখুলি চলত ধর্মীয় অনুমোদন নেই ছিল (কুরআন ও হাদিসে বৈধতা) সন্তান জন্মালে সন্তান সাধারণত দাস থেকে মুক্ত ইসলামি নিয়মে "উম্মে ওয়ালাদ" হলেও মা দাসীই থাকে ● ইসলামপন্থীদের দাবি: “ইউরোপিয়ানরাই আসল অপরাধী”
অনেকে বলেন, ইসলাম নয় বরং ইউরোপীয় দাস ব্যবসাই আসল অপরাধ। কিন্তু:
ইসলামি সাম্রাজ্যও আফ্রিকানদের দাস করেছিল এবং দাসের সংখ্যা ছিল লক্ষাধিক।
আফ্রিকানদের ‘জাঞ্জ’ (Zanj) বলে নিচু চোখে দেখা হতো।
ইসলামি দাসপ্রথা ছিল ধর্মীয় বৈধতা সম্বলিত, যা ইউরোপীয়দের মধ্যে ছিল না।
● একটি ঐতিহাসিক বাস্তবতা
ইউরোপীয় দেশগুলো দেরিতে হলেও দাসপ্রথা আইন করে নিষিদ্ধ করে (১৮০৭–১৮৮৮ সালের মধ্যে)।
কিন্তু ইসলামী শাসকেরা বা আলেমরা দাসপ্রথা নিষিদ্ধ করেনি। বরং ২০শ শতকের আন্তর্জাতিক চাপেই মুসলিম দেশগুলো বাধ্য হয় দাসপ্রথা বন্ধ করতে।
ইউরোপীয় দাসপ্রথা যতটা নির্মম, ইসলামি দাসপ্রথা ততটাই প্রাতিষ্ঠানিক ও ধর্মীয় অনুমোদিত ছিল।
ইসলামি সমাজে দাসপ্রথা ছিল নৈতিকভাবে বৈধ, অর্থনীতির অঙ্গ এবং ধর্মীয়ভাবে পবিত্র।
তাই একে ইউরোপীয় অপরাধ বলে পাশ কাটানো সত্যের বিকৃতি।৯. আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গিতে ইসলামে দাসপ্রথা: অস্বীকার না ব্যাখ্যা?
● ইসলামপন্থীদের বিব্রত অবস্থা
আজকের দুনিয়ায় দাসপ্রথা ঘৃণিত, অবৈধ এবং নৈতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য।
ফলে ইসলামে দাসপ্রথার বৈধতা নিয়ে মুসলমানরা চাপে পড়ে যান।
কেউ বলেন, “ইসলাম দাসপ্রথা বিলুপ্ত করতে চেয়েছে।”
আবার কেউ বলেন, “সেটা ছিল সেই সময়ের বাস্তবতা।”
● “ইসলাম ধাপে ধাপে দাসপ্রথা বিলুপ্ত করতে চেয়েছে”—এই দাবির সমস্যা:
একটি আয়াত বা হাদিসও নেই, যেখানে দাসপ্রথা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার নির্দেশ আছে।
বরং কুরআন ও হাদিসে বারবার দাস রাখার নিয়ম, যৌনদাসী ভোগের বিধান এবং দাসের সাথে আচরণের নিয়মাবলীই বলা আছে।
নবী মুহাম্মদ নিজেও দাস কিনেছেন, দাস রেখেছেন, যৌনদাসী ভোগ করেছেন—এটা প্রমাণিত।
● “সেই সময়ের বাস্তবতা” যুক্তির সমস্যা
“সময়টাই এমন ছিল”—এই যুক্তি ধরলে অনেক ধর্মীয় বিধানকে বাতিল করতে হয়।
তাহলে চুরি করলে হাত কাটার বিধানও কি সেই সময়ের বাস্তবতা?
ধর্ম যদি চিরন্তন হয়, তবে তার মানবিক নৈতিকতা সময়নিরপেক্ষ হওয়া উচিত।
● কুরআনের ভাষা স্পষ্ট
"তোমাদের স্ত্রীর সঙ্গে ও তোমাদের মালিকানাভুক্ত দাসীদের সঙ্গে সম্পর্ক বৈধ" (সূরা মু’মিনুন ২৩:৬)
এখানে “মালিকানাভুক্ত দাসী” অর্থাৎ যৌনদাসীকে বৈধ যৌনসঙ্গী হিসেবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
● ইসলামী স্কলারদের মতামত:
স্কলার মতামত
ইবনে তাইমিয়া দাসী ভোগে বৈধতা আছে, কারণ তারা সম্পত্তি
ইমাম মালিক কোনো অনুমতি ছাড়া মালিক তার দাসীকে ভোগ করতে পারে
ইউসুফ আল কারযাভি দাসপ্রথা ইসলামে বৈধ ছিল, তবে এখন আর প্রাসঙ্গিক নয়
● আধুনিক মুসলিমদের মধ্যে দ্বিধা
কেউ দাসপ্রথার কথা এড়িয়ে যান।
কেউ এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে অসংলগ্ন কথা বলেন।
কেউ সরাসরি অস্বীকার করেন, যদিও কুরআন ও হাদিসের বিরুদ্ধে যায়।
আধুনিক মূল্যবোধের চোখে ইসলামে দাসপ্রথা রক্ষা করা নৈতিক দ্বন্দ্ব তৈরি করে।
ইসলামপন্থীরা হয় সত্য গোপন করেন, না হয় অস্বীকার করে বসেন।
কিন্তু ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ইসলাম দাসপ্রথা রক্ষা করেছে এবং নিষিদ্ধ করেনি।১০. উপসংহার: ইতিহাসের মুখোমুখি হওয়া
● ইতিহাস অস্বীকার করলে মুক্তি মেলে না
ইসলামে দাসপ্রথা ছিল—এটা একটি অস্বীকারযোগ্য সত্য নয়।
কুরআন, হাদিস, ফিকহ ও ইসলামী শাসকদের ইতিহাস ঘাটলে দাসপ্রথা স্পষ্টভাবে প্রতিষ্ঠিত।
এটি ছিল শুধুমাত্র অর্থনৈতিক নয়, বরং ধর্মীয়ভাবে অনুমোদিত একটি প্রথা।
● দাসপ্রথা বিলুপ্ত করেনি ইসলাম
ইসলাম কখনও দাসপ্রথা নিষিদ্ধ করেনি, বরং দাসের অধিকার নিশ্চিত করার কথা বলেছে।
ইসলামের প্রাথমিক যুগে দাসমুক্তিকে পুণ্য হিসেবে গণ্য করা হলেও, দাস রাখাই ছিল মূল ধারা।
ইসলামী সাম্রাজ্যগুলোতে দাসপ্রথা ছিল অর্থনীতি ও সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
● সত্যের মুখোমুখি হওয়া জরুরি
ইতিহাসের সত্যগুলোকে জানতে ও জানাতে গেলে আবেগ নয়, দরকার যুক্তি ও বস্তুনিষ্ঠতা।
যারা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগার ভয়ে সত্য গোপন করেন, তারা ইতিহাসকে বিকৃত করেন।
সত্যকে মানা মানেই ধর্মের বিরুদ্ধাচরণ নয়—বরং এটা জ্ঞানচর্চার পথ।
● আজকের পাঠকের জন্য বার্তা
আধুনিক মূল্যবোধ ও মানবাধিকার যদি গুরুত্বপূর্ণ হয়, তাহলে ইসলামের দাসপ্রথা সম্পর্কেও আমাদের জানতে, বুঝতে ও প্রশ্ন করতে হবে।
সত্যকে স্বীকার করে, অতীত থেকে শেখাই মানুষ হিসেবে আমাদের বড়ত্ব।
🔚 সারসংক্ষেপ
ইসলাম দাসপ্রথা নিষিদ্ধ করেনি, বরং সেটাকে নিয়ন্ত্রণ করেছে এবং বৈধতা দিয়েছে।
কুরআন, হাদিস ও ইসলামী স্কলাররা এই প্রথাকে সমর্থন করেছেন।
তাই আধুনিক যুগে এর ব্যাখ্যা না দিয়ে অস্বীকার করলে ইতিহাস বিকৃত হয়।
একজন মুক্তমনা মানুষ হিসেবে আমাদের উচিত—সত্যকে জানার সাহস রাখা।