কুরআনের পরস্পরবিরোধী আয়াত
কুরআনের পরস্পরবিরোধী আয়াতসমূহ: একটি সমালোচনামূলক পর্যালোচনা
মুসলিমরা দাবি করে কুরআন সর্বজ্ঞ স্রষ্টার অভ্রান্ত বাণী। কিন্তু সমালোচনামূলকভাবে পড়লে দেখা যায়, একই বিষয়ে বহু সাংঘর্ষিক বক্তব্য রয়েছে। এখানে ১৫টিরও বেশি পরস্পরবিরোধী আয়াত রেফারেন্সসহ তুলে ধরা হলো।
১. স্বাধীন ইচ্ছা নাকি আল্লাহর নিয়ন্ত্রণ
সূরা কাহফ ১৮:২৯ — “যে চায় সে ঈমান আনুক, আর যে চায় সে কুফরি করুক।”
সূরা ইব্রাহিম ১৪:৪ — “আল্লাহ যাকে চান তাকে হিদায়াত দেন এবং যাকে চান তাকে পথভ্রষ্ট করেন।”
➡ মানুষ কি স্বাধীন, নাকি আল্লাহর হাতে বাধ্য?
২. পৃথিবী কত দিনে সৃষ্টি
সূরা হুদ ১১:৭, সূরা ক্বাফ ৫০:৩৮ — ছয় দিনে।
সূরা ফুসসিলাত ৪১:৯-১২ — দুই দিন + চার দিন + দুই দিন = আট দিন।
➡ ছয় দিন নাকি আট দিন?
৩. কিয়ামতের দিনে বোঝা বহন
সূরা আনআম ৬:১৬৪, সূরা ফাতির ৩৫:১৮ — কেউ কারো বোঝা বহন করবে না।
সূরা আনকাবুত ২৯:১৩ — তারা অন্যের বোঝাও বহন করবে।
➡ সাংঘর্ষিক বক্তব্য।
৪. মদের ব্যাপারে নির্দেশ
সূরা বাকারা ২:২১৯ — মদের উপকার ও ক্ষতি দুটোই আছে।
সূরা নিসা ৪:৪৩ — মাতাল অবস্থায় নামাজে যেয়ো না।
সূরা মায়েদা ৫:৯০ — মদ শয়তানের অপবিত্র কাজ।
➡ ধাপে ধাপে নিষিদ্ধকরণ = পরস্পরবিরোধিতা।
৫. ফেরেশতাদের সংখ্যা
সূরা আনফাল ৮:৯ — এক হাজার ফেরেশতা।
সূরা ইমরান ৩:১২৫ — পাঁচ হাজার ফেরেশতা।
➡ এক হাজার নাকি পাঁচ হাজার?
৬. মুহাম্মদের ক্ষমা করার ক্ষমতা
সূরা নিসা ৪:৮০ — নবীর কোন ক্ষমতা নেই।
সূরা ইমরান ৩:১২৮ — নবী ক্ষমা বা শাস্তি দিতে পারেন।
➡ দ্বন্দ্ব।
৭. পৃথিবীর আকার
সূরা নুহ ৭১:১৯ — বিছানার মতো সমতল।
সূরা নাযিয়াত ৭৯:৩০ — ডিম্বাকৃতি।
➡ সমতল নাকি ডিম্বাকার?
৮. প্রথম মানব সৃষ্টি
সূরা ফুরকান ২৫:৫৪ — পানি থেকে।
সূরা রহমান ৫৫:১৪ — কাদা থেকে।
সূরা হিজর ১৫:২৬ — শুকনো মাটি থেকে।
➡ উপাদান এক নাকি তিন রকম?
৯. কুরআন কি সব কিছু ব্যাখ্যা করে?
সূরা নাহল ১৬:৮৯, সূরা আনআম ৬:৩৮ — সবকিছু ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
➡ অথচ বৈজ্ঞানিক বা যৌক্তিক প্রশ্নে অস্পষ্টতা স্পষ্ট।
১০. শাস্তি দুনিয়ায় নাকি আখিরাতে
সূরা আনআম ৬:৩১ — শাস্তি শুধু আখিরাতে।
সূরা সাজদা ৩২:২১ — দুনিয়াতেও শাস্তি দেয়া হবে।
➡ শাস্তি কোথায়?
১১. আগে পৃথিবী নাকি আসমান
সূরা ফুসসিলাত ৪১:৯-১২ — আগে পৃথিবী, পরে আসমান।
সূরা নাযিয়াত ৭৯:২৭-৩০ — আগে আসমান, পরে পৃথিবী।
➡ দ্বন্দ্ব।
১২. জাহান্নামের স্থায়িত্ব
সূরা নিসা ৪:১৬৯ — চিরকাল।
সূরা ইমরান ৩:২৪ — কয়েক দিনের জন্য।
➡ স্থায়িত্ব ভিন্ন ভিন্ন।
১৩. আল্লাহ কোথায়
সূরা ত্বাহা ২০:৫ — আরশের ওপরে।
সূরা হাদীদ ৫৭:৪ — সর্বত্র উপস্থিত।
➡ অবস্থান দুই রকম।
১৪. কিতাবের পরিবর্তন
সূরা ইউনুস ১০:৬৪ — আল্লাহর কথায় পরিবর্তন নেই।
সূরা রাদ ১৩:৩৯ — আল্লাহ চাইলে বাতিল করেন বা রাখেন।
➡ পরিবর্তন হয় কি হয় না?
১৫. কেয়ামতের সময়
সূরা মারইয়াম ১৯:৭৫ — কেয়ামত শিগগির।
সূরা লুকমান ৩১:৩৪ — কেয়ামতের জ্ঞান শুধু আল্লাহর কাছে।
➡ নির্দিষ্ট সময় নাকি অজানা?
উপসংহার
উপরের উদাহরণগুলো প্রমাণ করে যে কুরআনের ভেতরেই অসংখ্য পরস্পরবিরোধী বক্তব্য রয়েছে। মুসলিম আলেমরা “নাসিখ-মানসুখ” বলে সমস্যাকে ঢাকতে চাইলেও বাস্তবে এটি দেখায়—কুরআন কোন অভ্রান্ত ঐশী গ্রন্থ নয়, বরং মানুষের লেখা একটি বই যেখানে দ্বন্দ্ব, অসংগতি ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের প্রভাব স্পষ্ট।
কোন মন্তব্য নেই: