ভূমিকা
বাইবেল খ্রিষ্টান ধর্মের প্রধান ধর্মগ্রন্থ। বহু বিশ্বাসীর কাছে এটি "ঈশ্বরের নির্ভুল বাণী" হলেও, এতে রয়েছে এমন বহু বক্তব্য যা আধুনিক বৈজ্ঞানিক সত্যের সঙ্গে সম্পূর্ণ বিপরীত। এই প্রবন্ধে আমরা দেখাবো বাইবেলের কিছু বড় বৈজ্ঞানিক ভুল — প্রাচীন বিশ্বাস বনাম আধুনিক বিজ্ঞানের বাস্তবতা।
১. পৃথিবী স্থির ও অনড়
📖 বাইবেল বলে:
"He set the earth on its foundations; it can never be moved."
— Psalm 104:5
🔗 Bible Gateway - Psalm 104:5 (NIV)
বিশ্লেষণ:
এই আয়াত অনুযায়ী পৃথিবী কখনো নড়বে না — অর্থাৎ এটি স্থির। কিন্তু বিজ্ঞান বলে পৃথিবী প্রতিনিয়ত নিজ অক্ষে এবং সূর্যের চারদিকে ঘুরছে।
বিজ্ঞান বলে:
পৃথিবী ঘূর্ণায়মান এবং প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৪৬৫ মিটার বেগে নিজ অক্ষে আবর্তিত হচ্ছে।
🔗 NASA - Earth's Rotation
২. সূর্য থেমে গিয়েছিল যোশুয়ার জন্য
📖 বাইবেল বলে:
"So the sun stood still, and the moon stopped..."
— Joshua 10:13
🔗 Bible Hub - Joshua 10:13
বিশ্লেষণ:
সূর্য থেমে যাওয়ার কথা বলা হচ্ছে, যেন দিন দীর্ঘ হয়। বাস্তবে সূর্য নয়, পৃথিবী ঘোরে। পৃথিবী হঠাৎ থেমে গেলে বিশাল ধ্বংস হতো।
বিজ্ঞান বলে:
পৃথিবীর আবর্তন হঠাৎ থেমে গেলে ভূমিকম্প, জলোচ্ছ্বাস ও সম্পূর্ণ ধ্বংস নেমে আসত।
🔗 Live Science - What would happen if Earth stopped spinning?
৩. নারীর সৃষ্টি পুরুষের পাঁজর থেকে
📖 বাইবেল বলে:
"Then the Lord God made a woman from the rib he had taken out of the man..."
— Genesis 2:22
🔗 Bible Gateway - Genesis 2:22
বিশ্লেষণ:
এই আয়াত অনুযায়ী, নারীর উৎপত্তি পুরুষের শরীর থেকে, যা জেনেটিক ও জৈবিকভাবে ভুল।
বিজ্ঞান বলে:
নারী ও পুরুষের জৈবিক বিকাশ সমানভাবে নিষিক্ত ডিম্বাণু থেকে শুরু হয়।
🔗 National Library of Medicine - Human Reproduction
৪. পৃথিবীর বয়স মাত্র কয়েক হাজার বছর?
📖 বাইবেলভিত্তিক হিসাব (Ussher chronology):
ঈশ্বর পৃথিবী সৃষ্টি করেন আনুমানিক ৪০০৪ খ্রিস্টপূর্বে — অর্থাৎ মাত্র ~৬০০০ বছর আগে।
বিজ্ঞান বলে:
পৃথিবীর বয়স প্রায় ৪.৫৪ বিলিয়ন বছর, যা প্রমাণিত রেডিওমেট্রিক ডেটিং দ্বারা।
🔗 Wikipedia - Age of the Earth
🔗 American Museum of Natural History
৫. সব জীব এক নৌকায়? নূহের প্লাবন
📖 বাইবেল বলে:
ঈশ্বর নূহকে বলেন প্রতিটি প্রাণীর এক জোড়া করে তার নৌকায় তুলতে (Genesis 6:19-20)।
🔗 Bible Gateway - Genesis 6:19
বিশ্লেষণ:
বিশ্বের লক্ষ লক্ষ প্রজাতির প্রাণী কীভাবে একটি কাঠের নৌকায় বাস করল? জলজ প্রাণী কীভাবে বেঁচে রইল? কোথা থেকে খাবার এল?
বিজ্ঞান বলে:
এই ঘটনাটি বিজ্ঞান ও ইতিহাসে কোনোদিন ঘটেনি। Geological evidence বা ফসিল রেকর্ডেও কোনো ‘বিশ্বব্যাপী প্লাবন’ এর প্রমাণ নেই।
🔗 TalkOrigins Archive - Problems with Noah’s Ark
খ্রিষ্টান ধর্মের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ বাইবেলকে বহু মানুষ ঈশ্বরপ্রদত্ত এবং নিঃসন্দেহ সত্য বলে বিশ্বাস করেন। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান যখন চোখে আঙ্গুল দিয়ে বাস্তবতা দেখায়, তখন আমাদের প্রশ্ন করতেই হয়—সব সত্য কি ধর্মগ্রন্থে লেখা আছে? নাকি সেগুলো কালের পরিক্রমায় মানুষের কল্পনা ও ভুল যুক্তির ফসল?
এই লেখায় আমরা দেখেছি—বাইবেলে পৃথিবী স্থির বলা হয়েছে, অথচ বিজ্ঞান বলছে পৃথিবী ঘূর্ণায়মান। নারীর উৎপত্তি পুরুষের পাঁজর থেকে বলা হলেও জিনতত্ত্ব বলে, নারী ও পুরুষের উৎস এককোষী নিষিক্ত ডিম্বাণু। এমনকি, "সূর্য থেমে গিয়েছিল" এমন অবৈজ্ঞানিক কল্পনাও রয়েছে বাইবেলের পাতায়।
একটি ধর্মগ্রন্থ যদি নিজেকে সর্বজ্ঞানের উৎস বলে দাবি করে, তাহলে তাতে থাকা বৈজ্ঞানিক ভুল ক্ষমার অযোগ্য। ঈশ্বর যদি সত্যি সর্বজ্ঞ হতেন, তাহলে তিনি এমন ভুল করতেন না। অতএব, বাইবেলের এই বৈজ্ঞানিক ভুলগুলো প্রমাণ করে দেয়—এটি কোনো সর্বজ্ঞ ঈশ্বরের লেখা নয়, বরং প্রাচীনকালে জ্ঞানবিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতায় মানুষ যা বিশ্বাস করত, তাই কাগজে লিপিবদ্ধ হয়েছে।
আমরা চাইব, মানুষ যেন প্রশ্ন করে, চিন্তা করে, পরীক্ষা করে—অন্ধভাবে বিশ্বাস না করে। কারণ বিজ্ঞান প্রশ্নকে ভয় পায় না, বরং উৎসাহ দেয়; কিন্তু ধর্ম ভয় পায়।