সূচিপত্র
- ভূমিকা
- ১. সূর্য ডুব যায় কাদা পানি ভর্তি ঝর্ণায়?
- ২. আকাশপথে কুরআন নেমেছে?
- ৩. পৃথিবী কি সমতল?
- ৪. শুক্রাণু কোথা থেকে বের হয়?
- ৫. মহাকাশ ভেদ করে কি সাত আসমান আছে?
- ৬. পৃথিবী ছয় দিনে সৃষ্টি হয়েছে?
- ৭. জিনরা আগুন থেকে সৃষ্টি?
- ৮. মাউন্টেইন পেগ থিওরি ভুল?
- ৯. ব্যাধির উৎস দোয়া না পড়া পানি?
- ১০. নবী উট ডাকলে পাহাড় থেকে উট বের হয়?
- উপসংহার
ভূমিকা
ধর্মীয় কিতাবের কথাগুলোকে আজও অনেকে প্রশ্নাতীত সত্য বলে মেনে নেয়। কিন্তু বর্তমান যুগ বিজ্ঞানের যুগ। এই যুগে কেউ যদি বলে, “সূর্য কাদা পানি ভর্তি ঝর্ণায় ডুবে”, কিংবা “শুক্রাণু বের হয় পিঠের হাড় আর বুকের হাড় থেকে”—তাহলে প্রশ্ন না করে উপায় আছে? ধর্মগ্রন্থগুলো কি আসলেই স্রষ্টার বানী? না কি সেগুলো মানুষের তৈরি গল্পগাঁথা, যার পেছনে যুক্তি নেই, বিজ্ঞান নেই, বাস্তবতা নেই? এই ব্লগের মাধ্যমে আমরা কুরআন ও হাদিসের এমন কিছু বক্তব্য খতিয়ে দেখব—যা বিজ্ঞান ও বাস্তবতার সঙ্গে মেলে না।
খটকা কি লাগে না?
১. সূর্য ডুব যায় কাদা পানি ভর্তি ঝর্ণায়?
কুরআনের দাবি: সূর্য অস্ত যায় এমন একটি জায়গায় যেখানে কাদা পানি রয়েছে।
➤ আয়াতটি নিচে দেওয়া হল:
সূরা কাহফ ১৮:৮৬
"যখন সে (যুলকারনাইন) সূর্যাস্তের স্থানে পৌঁছল, তখন সে সূর্যকে একটি কাদা পানি ভর্তি ঝর্ণায় অস্ত যেতে দেখল..."
― (১৮:৮৬)
এই আয়াত অনুযায়ী, পৃথিবীর কোনো প্রান্তে এমন একটি জায়গা আছে যেখানে সূর্য বাস্তবেই কাদা পানিতে ডুবে যায়। এটি প্রতীকী নয়, বরং সরাসরি পর্যবেক্ষণ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
বিশ্লেষণ:
- সূর্য একটি গ্যাসীয় গোলক, যার ব্যাস প্রায় ১৪ লক্ষ কিমি।
- এটি পৃথিবী থেকে গড়ে ১৫ কোটি কিমি দূরে।
- এটি কোনোভাবেই কাদা পানিতে বা পৃথিবীর কোনো স্থানে অস্ত যেতে পারে না।
এই দাবি সরাসরি আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞান, পৃথিবীর গঠন, ও সূর্যের অবস্থানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এরপরও ধর্মবিশ্বাসীরা বলে এটি "দৃশ্যমান বর্ণনা" মাত্র। কিন্তু আয়াতে কোথাও বলা হয়নি এটি কোনো ভুল দেখার ফল বা রূপক ভাষা। বরং বর্ণনা করা হয়েছে সরাসরি দৃশ্যপট।
প্রশ্ন: ১৪০০ বছর আগের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে যদি আল্লাহ বর্ণনা করেন, তবে সেটা কি নির্ভুল "ঈশ্বরীয় জ্ঞান" হয়?
২. মানুষ সৃষ্টি হয় রক্তের জমাট থেকে?
কুরআনের দাবি: মানুষ সৃষ্টি হয়েছে আলাক্ব থেকে, যার অর্থ করা হয়েছে “জমাট রক্ত”।
সূরা আলাক ৯৬:২
"তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন আলাক্ব থেকে।"
― (৯৬:২)
আরবী শব্দ “আলাক্ব” (علق) অর্থ:
- জমাট রক্ত (clotted blood)
- ঝুলে থাকা বস্তু (that which clings)
- জোঁকজাতীয় কিছু
➤ বেশিরভাগ তাফসীর ও অনুবাদে “জমাট রক্ত” অর্থই ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন:
তাফসীর ইবনে কাসীর: "আলাক মানে হল জমাট রক্ত।"
ইমাম তাবারী: "আলাক শব্দ দ্বারা বোঝানো হয়েছে সেই ধাপে যেখানে রক্ত জমাট বাঁধে।"
বৈজ্ঞানিক বাস্তবতা:
- মানব ভ্রূণ একটি রক্তের দানা বা জমাট রক্ত নয়।
- ভ্রূণ প্রথম দিকে কোষ বিভাজনের মাধ্যমে গঠিত হয়, রক্ত ধীরে ধীরে গঠিত হয় পরে।
- মাতৃগর্ভে ভ্রূণ একটি জীবন্ত কোষগুচ্ছ — যা সম্পূর্ণ প্রাণবন্ত, কোষে ভরা এবং রক্তের সাথে সম্পর্কহীন একধাপ।
এই বক্তব্যটি সরাসরি ভ্রূণ বিকাশবিজ্ঞান বা embryology-র সঙ্গে সাংঘর্ষিক। মানুষ কখনোই রক্তের দলা ছিল না। এটা একেবারে ভুল এবং আদিম ধারণা।
এখনকার মুসলিম চিন্তাবিদেরা “আলাক” এর অর্থ জোঁক বা ঝুলে থাকা বস্তু বলার চেষ্টা করেন, যাতে ভুলটা ধরা না পড়ে। কিন্তু সেই ব্যাখ্যা প্রাচীন তাফসীর বা অনুবাদের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
৩. পৃথিবী কি সমতল ও বিস্তৃত?
কুরআনের দাবি:
"তিনি পৃথিবীকে করেছেন বিছানার মতো বা সমতল।"
― (সূরা নাবা ৭৮:৬)
"এবং আমি পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছি।"
― (সূরা ধারিয়াত ৫১:৪৮)
"তিনি পৃথিবীকে করেছেন গরুর মতো পাতা।"
― (সূরা গাশিয়া ৮৮:২০)
তাফসীর ও অর্থ বিশ্লেষণ:
- “মাহদ” অর্থ বিছানা বা মসৃণ করা বস্তু
- “দাহা” অর্থ ছড়ানো বা বিস্তৃত করা
- তাফসীরে অনেক সময় বলা হয়েছে পৃথিবীকে ছড়ানো বা বিস্তৃত করা হয়েছে যেন মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করতে পারে
বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি:
- পৃথিবী একটি গোলাকার বস্তু (oblate spheroid)
- পৃথিবীর গোল আকৃতি প্রমাণিত হয়েছে মহাকাশ ও স্যাটেলাইট চিত্রে
- প্রাচীন যুগে অনেক সভ্যতাই পৃথিবীকে সমতল ভাবত, কুরআনের লেখাও সেই ভাবনারই প্রতিফলন
অতএব, এখানে পরিষ্কারভাবে দেখা যায় যে, কুরআনের বক্তব্যটি আধুনিক বিজ্ঞানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। পৃথিবীকে বিছানা বা সমতল হিসেবে উপস্থাপন করা হলে সেটি একটি ভুল ধারণাকেই বৈধতা দেয়।
৪. শুক্রাণু কোথা থেকে বের হয়? পিঠের হাড় আর বুকের হাড়?
কুরআনের বক্তব্য:
“সে সৃষ্টি হয়েছে উত্তেজনাপূর্ণ পানি থেকে,
যা পিঠের হাড় ও বুকের হাড়ের মধ্য হতে নির্গত।”
― সূরা তারিক (৮৬:৬-৭)
আরবি মূল শব্দ:
- صلب (Sulb): পিঠের হাড় বা কটিদেশ (loins)
- ترائب (Tara’ib): বুকের হাড় বা বুকের হাড়ের অঞ্চল
বিজ্ঞান কী বলে?
- মানব শুক্রাণু উৎপন্ন হয় শুধু পুরুষের অণ্ডকোষে (testicles), যা পিঠ বা বুকের হাড়ের সাথে কোনোভাবেই সম্পর্কিত নয়
- শুক্রাণু সৃষ্টি, সংরক্ষণ এবং পরিপক্বতা ঘটে epididymis ও vas deferens-এ, যেগুলো কোমরের নিচে থাকে
- নারীদের ক্ষেত্রে তো এই বক্তব্যের কোনোই যৌক্তিকতা দাঁড়ায় না, কারণ তাদের শরীরে শুক্রাণু তৈরি হয় না
অতএব, এটা প্রমাণ করে যে কুরআনের এই বক্তব্য **বিজ্ঞানভিত্তিক নয়**, বরং প্রাচীন যুগের ভ্রান্ত শারীরবিদ্যার ধারণার প্রতিফলন।
৫. মহাকাশ ভেদ করে কি সাত আসমান আছে?
কুরআনের বক্তব্য:
“তিনি সৃষ্টি করেছেন সাত আসমান স্তরে স্তরে। তুমি দয়াময় আল্লাহর সৃষ্টিতে কোনো ত্রুটি দেখতে পাবে না।” ― সূরা মুলক (৬৭:৩)
“অতঃপর তিনি তা (আকাশ) কে সাত আসমান করে গড়ে তুললেন এবং প্রত্যেক আকাশে তিনি তার বিধান অবতীর্ণ করলেন।” ― সূরা ফুসসিলাত (৪১:১২)
সাত আসমানের ব্যাখ্যা কী?
- ক্লাসিক্যাল তাফসির ও হাদিসগুলো বলছে, সাতটি আসমান একটির উপর আরেকটি স্তরে স্তরে আছে
- প্রত্যেকটি আসমানে ফেরেশতা, জান্নাত, কিংবা অন্য সৃষ্টি আছে বলা হয়েছে
- তবে কোথাও পরিষ্কার ব্যাখ্যা নেই এসব "আসমান" কী পদার্থ দিয়ে তৈরি, বা কত দূরে
বিজ্ঞান কী বলে?
- আধুনিক বিজ্ঞান অনুসারে আকাশ বলতে বোঝায় বায়ুমণ্ডল ও মহাশূন্য
- বায়ুমণ্ডলে কয়েকটি স্তর আছে ঠিকই, যেমনঃ ট্রপোস্ফিয়ার, স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার, মেসোস্ফিয়ার ইত্যাদি, কিন্তু সেগুলোর মধ্যে কোনো আকাশ বা পৃথক বিশ্ব নেই
- মহাকাশ বা ইউনিভার্স একটি অসীম, প্রসারিত মহাশূন্য যার ভেতরে আছে গ্রহ, নক্ষত্র, গ্যালাক্সি, কৃষ্ণগহ্বর ইত্যাদি
- এ পর্যন্ত বিজ্ঞান সাতটি স্তরে বিভক্ত আকাশ বা কোনো শারীরিক “আসমান” এর অস্তিত্ব পায়নি
তাহলে কুরআনের সাত আসমান কীভাবে ব্যাখ্যা করবো? এটা কি বাস্তব কোনো গঠন, না কি কল্পনার গল্প?
৬. পৃথিবী ছয় দিনে সৃষ্টি হয়েছে?
কুরআনের বক্তব্য:
“নিশ্চয়ই তোমাদের প্রভু হলেন আল্লাহ, যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হয়েছেন।” ― সূরা আল-আরাফ (৭:৫৪)
“আল্লাহ সেই, যিনি ছয় দিনে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁর আরশ ছিল পানির উপর।” ― সূরা হুদ (১১:৭)
আবার সূরা হা-মীম সাজদায় বলা হয়েছে:
“বল, তোমরা কি কুরআনের প্রতি অবিশ্বাস করছ, অথচ আল্লাহ দুই দিনে পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন? ... অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মনোনিবেশ করলেন, যখন তা ধোঁয়া ছিল, এবং বললেন: ‘আকাশ ও পৃথিবী উভয়ে আসো ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়।’ ... অতঃপর চার দিনে পৃথিবীর রিযিক নির্ধারণ করলেন।” ― সূরা হা-মীম সাজদা (৪১:৯-১২)
তাহলে সমস্যাটা কোথায়?
- সূরা হা-মীম সাজদা অনুসারে, পৃথিবী সৃষ্টি + রিযিক নির্ধারণ = ২ + ৪ = ৬ দিন
- তারপর বলা হয়েছে আকাশ সৃষ্টি হয়েছে ২ দিনে (আয়াত ১২)
- তাহলে মোট সময় দাঁড়ায় ৮ দিন! কিন্তু অন্য সূরাগুলোতে ৬ দিন বলা হয়েছে
- এই গাণিতিক গরমিল নিয়ে ইসলামি স্কলাররা বিভিন্ন ব্যাখ্যা দিলেও, সেগুলো আর্টিফিশিয়াল সমাধান ছাড়া কিছু না
বিজ্ঞান কী বলে?
- আধুনিক বিজ্ঞানের মতে, মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে ১৩.৮ বিলিয়ন বছর আগে, বিগ ব্যাং এর মাধ্যমে
- পৃথিবী গঠিত হয়েছে প্রায় ৪.৫৪ বিলিয়ন বছর আগে
- এটা কোন “ছয় দিন”-এর ব্যাপার না। আর সেই “দিন” শব্দটা কি পৃথিবীর দিন? তখন তো পৃথিবীই ছিল না!
আবার দেখা যায়, কুরআনের আলাদা আলাদা সূরায় দিনসংখ্যা নিয়ে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। তখন প্রশ্ন উঠে—আল্লাহ কি এমন ভুল তথ্য দেবেন?
৭. জিনরা আগুন থেকে সৃষ্টি?
কুরআনের বক্তব্য:
“আর আমি জিন জাতিকে আগুনের শিখা থেকে সৃষ্টি করেছি।” — সূরা হিজর (১৫:২৭)
“আর জিনকে আমি সৃষ্টি করেছি আগুনের সুশীতল শিখা থেকে।” — সূরা রহমান (৫৫:১৫)
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে:
- আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে “আগুন” কোনো পদার্থ নয়, বরং এটি একটি রাসায়নিক বিক্রিয়ার দৃশ্যমান ফলাফল, যেখানে তাপ ও আলো নির্গত হয়
- অর্থাৎ আগুনের "শিখা" কোনো গঠনমূলক বস্তু নয়, যা দিয়ে একটি প্রাণী সৃষ্টি করা সম্ভব
- সৃষ্টির উপাদান হিসেবে “আগুন” বললে সেটা একধরনের কল্পবিজ্ঞান বা পৌরাণিক বিশ্বাসের মতো শোনায়
- আগুন কোনো কণা, মলিকিউল বা কোষের গঠিত কিছু না, তাই তাতে DNA বা জীবন ধারণের সম্ভাবনা থাকে না
আরো একটা মজার কথা:
- জিনরা যদি আগুন থেকে সৃষ্টি হয়, তাহলে তারা কি তাপ সহ্য করতে পারে? আগুন কি তাদের ক্ষতি করে না?
- তাহলে হেলফায়ার (জাহান্নামের আগুন) দিয়ে জিনদের শাস্তি দেওয়া কেমন যৌক্তিক?
- ঠিক যেমন মানুষ মাটির তৈরি হলে, কি মানুষকে মাটিতে পুঁতে দিলে শাস্তি হয়?
বিজ্ঞান কী বলে?
- কোনো বিজ্ঞানে এমন প্রাণীর অস্তিত্ব প্রমাণিত হয়নি যারা “আগুন” দিয়ে গঠিত
- জিনেরা অদৃশ্য, আগুনে গঠিত, আর মানুষের উপর প্রভাব ফেলে — এগুলো লোককথা ও কুসংস্কারের মতই শোনায়
এতসব কথা শুনে এখনো কি মনে হয় না, ব্যাপারটা একটু ভেবে দেখা দরকার?
৮. মাউন্টেইন পেগ থিওরি ভুল?
কুরআনের বক্তব্য:
“আমি পাহাড়কে স্থাপন করেছি পৃথিবীতে যেন তা তোমাদেরকে কাঁপিয়ে না দেয়।” — সূরা আম্বিয়া (২১:৩১)
“এবং আমি পাহাড়গুলোকে করেছি পেরেক (পেগ) এর মতো।” — সূরা নবাঃ (৭৮:৬-৭)
এই আয়াত অনুযায়ী:
- পাহাড় পৃথিবীর কম্পন বা কাঁপুনি রোধ করে
- পাহাড়কে উপমা দেয়া হয়েছে “পেরেক” বা খুঁটির মতো, অর্থাৎ মনে করা হয়েছে এগুলো পৃথিবীর স্থিতিশীলতা রক্ষা করে
কিন্তু আধুনিক ভূতত্ত্ব কী বলে?
- পাহাড়ের উৎপত্তি হয় ভূ-ত্বকের টেকটোনিক প্লেট একে অপরের সঙ্গে ধাক্কা খাওয়ার ফলে
- পাহাড় কোনো “স্থিরকারী” নয়, বরং ভূমিকম্পের ফলাফল
- উদাহরণস্বরূপ, হিমালয় গঠিত হয়েছে ভারতীয় প্লেট ইউরেশিয়ান প্লেটে ধাক্কা খাওয়ার ফলে
- এই প্লেট মুভমেন্টই আবার ভূমিকম্প ঘটায়
- অর্থাৎ, যেখানে পাহাড় বেশি, সেখানেই ভূমিকম্প বেশি হয়
এখন প্রশ্ন:
- যদি পাহাড় ভূমিকম্প প্রতিরোধ করতো, তাহলে পাহাড়ি অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি ভূমিকম্প কেন হয়?
- কেন হিমালয়, জাপান, ইন্দোনেশিয়া, আল্পস — সবজায়গা ভূমিকম্পপ্রবণ?
- এই "পেরেক" উপমা কি বিজ্ঞানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ?
আরেকটি কথা:
- পেরেক বসালে তা অন্য কিছু থামিয়ে রাখে, কিন্তু পাহাড় স্থির করার কিছু নয়
- এই উপমাটি শুনতে ভালো লাগলেও বিজ্ঞানভিত্তিক নয়
এইসব জেনে আজও কি বিশ্বাস রাখবি, যে পাহাড় কাঁপুনি ঠেকায়?
৯. ব্যাধির উৎস দোয়া না পড়া পানি?
ইসলামী হাদিস অনুযায়ী:
“যখন কোন তোমাদের কেউ ঘুম থেকে ওঠে, সে যেন তিনবার নাক ঝাড়ে, কারণ শয়তান রাতে তার নাকের মধ্যে অবস্থান করে।” — সহীহ বুখারী, হাদিস 3295
“যখন কেউ তোমাদের মধ্যে ঘুম থেকে জেগে উঠে, তখন সে যেন কোনো পাত্রে ডুবিয়ে পানি না খায় যতক্ষণ না সে তিনবার হাত ধুয়েছে, কারণ কেউ জানে না, রাতে তার হাত কোথায় ছিল।” — সহীহ মুসলিম, হাদিস 278
এই হাদিস থেকে বোঝা যায়:
- শয়তান নাকি মানুষের শরীরে ও পানির পাত্রে ঢুকে রোগের কারণ হতে পারে
- তবে যদি কেউ দোয়া পড়ে বা নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে পানি খায়, তাহলে সেই পানি নিরাপদ
- অর্থাৎ পানি বা হাত ধোয়া শুধু জীবাণুর জন্য নয়, বরং শয়তান থেকে বাঁচার জন্য
কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান কী বলে?
- জীবাণুর উৎস হল ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ফাঙ্গাস ইত্যাদি
- পানির মাধ্যমে জলবাহিত রোগ (waterborne diseases) ছড়ায় — যেমন কলেরা, টাইফয়েড, হেপাটাইটিস A
- এইসব রোগ প্রতিরোধে দরকার জীবাণুমুক্ত পানি ও পরিচ্ছন্নতা, দোয়া নয়
- শরীরে “শয়তান” প্রবেশ বা নাকের মধ্যে ঢোকার কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই
আরও খেয়াল কর:
- আজও যদি কেউ মনে করে দোয়া না পড়লে পানি ব্যাধি ছড়ায়, তাহলে বিশুদ্ধ পানির কাজ কী?
- আজ যদি বদ্ধ ডোবার পানি দোয়া পড়ে খাও, সেটা কি নিরাপদ?
এখন বল, দোয়া না পড়ে পানি খেলে রোগ হবে, এই বিশ্বাস কি বিজ্ঞানসম্মত নাকি অলৌকিক কল্পনা?
১০. নবী উট ডাকলে পাহাড় থেকে উট বের হয়?
ইসলামী কাহিনি অনুযায়ী:
“সামূদ জাতিকে সতর্ক করার জন্য আমরা তাদের ভাই সালেহকে প্রেরণ করেছিলাম... তারা বলল, ‘তুমি যদি সত্যবাদী হও, তবে আমাদের জন্য এক উটনী বের করো এই পাহাড় থেকে।’ সালেহ বললেন, ‘এই হল আল্লাহর উটনী, সে তোমাদের জন্য একটি নিদর্শন।’” — কুরআন, সূরা আশ-শু'আরা, 26:141–158
অর্থাৎ, কুরআনের ভাষ্য অনুযায়ী:
- সামূদ জাতি অলৌকিকভাবে একটি উটনী চেয়েছিল
- নবী সালেহ পাহাড়ে ইঙ্গিত করলে পাহাড় ফেটে উটনী বের হয়
- এই উটনী ছিল “আল্লাহর নিদর্শন”, যার পানি খাওয়ার দিন পর্যন্ত ঠিক করে দেওয়া হয়েছিল
এখন প্রশ্ন হল, এটা কি সম্ভব?
- উট হচ্ছে স্তন্যপায়ী প্রাণী যার জন্ম হয় গর্ভধারণের মাধ্যমে, জাদু বা পাথর থেকে না
- পাহাড়ের ভিতর গর্ভবতী উট লুকিয়ে ছিল — এটা কি বিজ্ঞান মানে?
- এই উট পানি খেত একদিন, বাকি দিন জাতি খেত — এটা বাস্তব জীববিজ্ঞানের সাথে সাংঘর্ষিক
আরও খেয়াল কর:
- এই “আল্লাহর উটনী” কাহিনির পেছনে কুসংস্কার ও অলৌকিকতা প্রচারের স্পষ্ট প্রবণতা
- সত্যিই যদি উট বের হয় পাহাড় থেকে, তাহলে সেটা আজও হতে পারত
- এই কাহিনি কি অলৌকিক কল্পনা না বাস্তব ইতিহাস?
উপসংহার
আমরা এই পর্বে কুরআন এবং হাদিসে বর্ণিত এমন কিছু দাবির দিকে নজর দিয়েছি যেগুলো বাস্তবতা এবং বিজ্ঞানের আলোকে অসম্ভব বা প্রশ্নবিদ্ধ। সূর্য ডোবে কাদা পানিতে, শুক্রাণু বের হয় পিঠ আর বুকের মাঝখান থেকে, পাহাড় ফেটে উট বের হয় — এগুলো এমন দাবি যা আধুনিক বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদ পুরোপুরি খণ্ডন করে।
বিশ্বাসকে অন্ধভাবে অনুসরণ করলে তা আত্মসম্মান ও যুক্তিবোধ হ্রাস করে। কুরআন যদি সত্যিই সর্বজ্ঞানীর বাণী হত, তাহলে তার প্রতিটি কথা পরীক্ষার যোগ্য এবং বাস্তবতার সাথে মিল থাকত।
এইসব আলোচনার উদ্দেশ্য কাউকে হেয় করা নয়, বরং একটি প্রশ্নবোধ জাগানো—যাতে মানুষ অন্ধ অনুসরণ ছেড়ে সত্যকে অনুসন্ধান করে।
আরও অনেক দাবি আছে যা আমরা পরবর্তী পর্বগুলোতে বিশ্লেষণ করব ইনশা... ওহ, মানে বাস্তবতাকে কেন্দ্র করে।