নবুওয়াতের মানদণ্ড: মুহাম্মদ কি সত্যিই নবী ছিলেন? (পর্ব-০২)

 

 

মুহাম্মদ: নারী-সম্মান না নারী-কৌশল?
ইসলামী বিবরণ অনুসারে, মুহাম্মদ নারীদের ‘মর্যাদা’ দিয়েছেন। কিন্তু ঐতিহাসিক তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়:

মুহাম্মদের বিয়ে ও নারীদের ব্যবহার:

  1. ১১টি স্ত্রী ছিলেন মুহাম্মদের (আয়েশা, খাদিজা, হাফসা, জয়নব, সাওদা, উম্মে সালমা, উম্মে হাবিবা, মায়মূনা, জুয়াইরিয়া, সাফিয়া, রাইহানা)। এর বাইরে ছিলেন বহু দাসীগণিমতের নারীরা, যাদের তিনি ‘বিবাহ’ না করেই সহবাস করেছেন।

  2. আয়েশার বয়স: ইসলামী হাদিস অনুযায়ী, মুহাম্মদ আয়েশাকে ৬ বছর বয়সে বিবাহ করেন এবং ৯ বছর বয়সে সহবাস করেন। আজকের মানবাধিকার ও শিশু-অধিকার মানদণ্ডে এটি নৈতিক অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়।

  3. সাফিয়ার ঘটনা: খায়বার যুদ্ধের পর, মুহাম্মদ সাফিয়ার স্বামী ও পরিবারের অনেককে হত্যা করেন। পরে তাঁকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেন। সাফিয়া তখন বন্দী অবস্থায় ছিলেন। একে “বিবাহ” বলা হলেও এটি ক্ষমতার অবস্থান থেকে গৃহীত যৌন সম্পর্ক, যা আধুনিক সংজ্ঞায় সহানুভূতির মুখোশে মোড়ানো ধর্ষণ হিসেবেও দেখা যেতে পারে।

  4. গণিমতের মাল ও দাসী ব্যবহার: মুহাম্মদ কুরআনের ৪:২৪, ৩৩:৫০ ইত্যাদি আয়াতে ঘোষণা করেন যে, যুদ্ধ থেকে প্রাপ্ত নারীদাসীদের সঙ্গে সহবাস বৈধ। তাঁর নিজের জীবনেও এই নিয়ম ব্যবহার করে বহু নারীর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেন।

ইসলামে নারীর অবস্থান—মুহাম্মদের দৃষ্টিভঙ্গির প্রভাব:

  • পুরুষের ঊর্ধ্বে নারী: কুরআনে বলা হয়েছে, “পুরুষরা নারীদের ওপর কর্তৃত্বশীল” (৪:৩৪)। এটি মুহাম্মদের সময়েই প্রবর্তিত সামাজিক কাঠামোর প্রতিফলন।

  • বহুবিবাহ ও স্ত্রী নিয়ন্ত্রণ: পুরুষদের ৪টি স্ত্রী পর্যন্ত বিয়ে করার অনুমতি দেয়া হয় (৪:৩), কিন্তু মুহাম্মদের জন্য অনুমতি ছিল বিশেষভাবে বেশি, যেমন কুরআনের ৩৩:৫০ আয়াতে দেখা যায়।

  • স্ত্রী প্রহার: কুরআনে পুরুষদের স্ত্রীর অবাধ্য হলে তাদের ‘আঘাত’ করার অনুমতি দেয়া হয়েছে (৪:৩৪)। মুহাম্মদ নিজেই এ আয়াত প্রচার করেন।


তুলনামূলক বিচার: কে কোথায় দাঁড়ান?

চূড়ান্ত প্রশ্ন:
নবীর চরিত্র আমরা কী দিয়ে বিচার করব? শুধু রাজনৈতিক সফলতা ও শাসনক্ষমতা, নাকি নৈতিকতা, মানবতা, ও দুর্বলদের প্রতি আচরণ? যীশু যেখানে এক নিপীড়িত নারীর চোখের জলে ঈশ্বরের করুণা খুঁজেছেন, সেখানে মুহাম্মদের কর্মকাণ্ড অনেকাংশেই রাজনীতির বাস্তবতা দ্বারা প্রভাবিত, যেখানে নারী ছিল কখনও সান্ত্বনা, কখনও পুরস্কার, আবার কখনও কৌশল।
 

 

নারীদের প্রতি মুহাম্মদের মনোভাব, আচরণ ও নীতিগত অবস্থান:

 

১. মুহাম্মদের বহু বিবাহ — নৈতিকতা নাকি রাজনৈতিক কৌশল?

মুহাম্মদ একাধিক নারীকে বিয়ে করেছিলেন, যাদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন বিধবা, যুদ্ধবন্দি বা কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ পরিবার থেকে আগত। ইসলামি ব্যাখ্যায় এসব বিয়েকে “দয়া” ও “সামাজিক পুনর্বাসন” বলা হলেও, সমালোচকরা দেখেন এর পেছনে ক্ষমতা, প্রভাব ও যৌনতা—এই তিনটি কারণ।

  • খাদিজা: তাঁর প্রথম স্ত্রী, একজন ব্যবসায়ী ও ধনী নারী। তাঁর জীবদ্দশায় মুহাম্মদ আর বিয়ে করেননি।

  • আয়েশা: মাত্র ৬ বছর বয়সে বিয়ে হয়, consummation হয় ৯ বছর বয়সে। এটি আধুনিক নৈতিকতার আলোকে চরম বিতর্কিত।

  • সাফিয়া: খায়বার যুদ্ধে তাঁর স্বামী, ভাই ও আত্মীয়দের হত্যার পর মুহাম্মদ তাঁকে বিয়ে করেন। তিনি ছিলেন যুদ্ধবন্দি।

  • জয়নব বিনতে জাহশ: মুহাম্মদ নিজ পোষ্যপুত্র জায়েদের স্ত্রীকে তালাকের পর বিয়ে করেন। কুরআনের আয়াত (সূরা আহজাব 37) দিয়ে তা বৈধতা দেওয়া হয়।

সমালোচনা:
এই সমস্ত বিবাহের ঘটনা প্রশ্ন তোলে—এসব কি “নারীর মর্যাদা” প্রতিষ্ঠা, নাকি রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত ফায়দা তোলার উপায়?

 

২. নারীদের অধিকার ও মর্যাদা প্রসঙ্গে কোরআনিক ও মুহাম্মদের দৃষ্টিভঙ্গি

ইসলামের প্রচারে মুহাম্মদ নারীদের কিছু নতুন অধিকার দিয়েছেন বলে দাবি করা হয়—যেমন উত্তরাধিকার, বিবাহে সম্মতি, তালাকের অধিকার ইত্যাদি। কিন্তু এগুলোর পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এগুলো ছিল সীমিত, পুরুষ-নিয়ন্ত্রিত এবং অনেকক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক।

   * উত্তরাধিকার: কোরআনের মতে, নারী উত্তরাধিকার পায়, কিন্তু পুরুষের অর্ধেক। (সূরা নিসা 11)

    *তালাক: একজন পুরুষ একতরফাভাবে স্ত্রীকে তালাক দিতে পারে (তালাক, তালাক, তালাক), কিন্তু নারীর ক্ষেত্রে ‘খুলা’ নিতে হলে স্বামীর অনুমতি ও দেনমোহর ফিরিয়ে দিতে হয়।

    *প্রত্যক্ষ সাক্ষ্য: আদালতে নারীর সাক্ষ্য পুরুষের অর্ধেক হিসেবে গণ্য। (সূরা বাকারা 282)

   * পোশাক ও পর্দা: মুহাম্মদ নারীদের পর্দার আওতায় আনে, এমনকি তাঁর নিজের স্ত্রীরা পর্দার পেছনেই কথা বলতেন (সূরা আহজাব 53)। এ থেকে “হিজাব” ধারণার জন্ম।

সমালোচনা:
এগুলোকে “নারী-স্বাধীনতার যুগান্তকারী পদক্ষেপ” বলা হলেও আসলে তা ছিল পুরুষতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণের আধুনিকায়ন। সমানাধিকার বা নারীর নিজস্ব স্বতন্ত্রতা এই ব্যবস্থায় প্রতিষ্ঠা পায়নি। 


৩. মুহাম্মদের বহুবিবাহ ও নারীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি

মুহাম্মদের জীবনে নারীদের ভূমিকা শুধু পারিবারিক বা সামাজিক নয়, বরং রাজনৈতিক ও ধর্মীয় উদ্দেশ্যেও ব্যবহৃত হয়েছে বলে অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন। তাঁর ১১ জন স্ত্রী ও আরও দাসী নারীদের মধ্যে অনেকেই তাঁর দখলদারিত্ব বা রাজনৈতিক বিবেচনায় বিয়ে করা হয়েছিল।

   * খাদিজা: তাঁর প্রথম স্ত্রী, যিনি ব্যবসায়ী ছিলেন এবং মুহাম্মদের জীবিকা নির্বাহ করতেন। খাদিজার জীবদ্দশায় তিনি আর কোনো নারীকে বিয়ে করেননি।

   * আয়েশা: বাল্যবিবাহের সবচেয়ে বিতর্কিত উদাহরণ। হাদিস অনুযায়ী, আয়েশা ছয় বছর বয়সে বিয়ে হন এবং নয় বছর বয়সে consummation ঘটে (সহিহ বুখারী 5133)। এই বিষয়টি আজকের দৃষ্টিকোণ থেকে শিশু নিপীড়নের মধ্যে পড়ে।

   * জয়নব বিনতে জাহাশ: মুহাম্মদের দত্তকপুত্র জায়েদের স্ত্রী ছিলেন। জায়েদ তাঁকে তালাক দিলে মুহাম্মদ তাঁকে বিয়ে করেন (সূরা আহজাব 37)। এই ঘটনা মুহাম্মদকে নিজের দত্তকপুত্রের স্ত্রীকে বিয়ে করার বৈধতা দেয়ার জন্য কোরআনে “ওহি” নাজিল হয়।

    *সাফিয়া ও জুয়ারিয়া: যুদ্ধবন্দী নারীদের মধ্য থেকে মুহাম্মদ তাঁদেরকে বিয়ে করেন, যাঁদের স্বামীদের হত্যা করা হয়েছিল। এই বিবাহগুলো রাজনৈতিক ও দাসপ্রথার বৈধতার ক্ষেত্রেও ব্যবহার হয়েছে।

দাসী নারীদের ভোগ:
কোরআন বারবার “তোমাদের ডান হাত যাদের মালিক হয়েছে” কথাটি ব্যবহার করে (যেমন সূরা নিসা 3, 24), যার অর্থ হলো যুদ্ধবন্দী নারী বা দাসী। মুহাম্মদ নিজেও অনেক দাসী নারী ভোগ করেছেন, যাদের মধ্যে মারিয়া কিবতিয়া অন্যতম।

সমালোচনা:
নারীদের প্রতি এই আচরণ আধুনিক মূল্যবোধ অনুযায়ী নারীর মর্যাদা ও অধিকার লঙ্ঘনেরই সামিল। মুহাম্মদের ব্যক্তিগত জীবন ইসলামের নৈতিক আদর্শ হিসাবে দেখানো হলেও, এতে স্পষ্ট পুরুষতান্ত্রিক এবং নারীবিদ্বেষী উপাদান রয়েছে।

 

৪. যুদ্ধ, খুন ও জিজিয়া: ইসলামের বিস্তার ও মুহাম্মদের ভূমিকা

মুহাম্মদের নেতৃত্বে ইসলাম কেবল ধর্মীয় বার্তা দিয়েই নয়, বরং অস্ত্রের মাধ্যমে ও রাজনৈতিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিস্তার লাভ করে। তাঁর জীবনের শেষ দশকে যুদ্ধ, গণহত্যা ও শাস্তিমূলক অভিযানের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ।

মুহাম্মদের অংশগ্রহণে প্রধান যুদ্ধসমূহ:

    বদর যুদ্ধ (৬২৪ খ্রিঃ): মুহাম্মদের অনুসারীরা মক্কার কাফেলা লুট করতে গেলে প্রথম বড় যুদ্ধ সংঘটিত হয়। কাফেলাটি ছিল মক্কার ব্যবসায়ীদের মালপত্র বোঝাই। এই যুদ্ধের পর মুসলিমরা লুটের মাল গ্রহণকে বৈধতা দেয়।

    উহুদ যুদ্ধ (৬২৫ খ্রিঃ): মুসলিমদের পরাজয় ঘটে, তবে পরবর্তী কালে মুহাম্মদ রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী হন।

    খন্দক যুদ্ধ ও বনী কুরায়জা গণহত্যা (৬২৭ খ্রিঃ):
    এই যুদ্ধের পরে মুহাম্মদ বনী কুরায়জা নামে এক ইহুদি গোত্রকে বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করেন।

        হাদিস ও সিরাত অনুযায়ী, প্রায় ৬০০–৯০০ জন ইহুদি পুরুষকে একদিনে গর্দান কেটে হত্যা করা হয়।
        নারীদের দাসী বানানো হয়, ও এক যুবতী, রেহানা, মুহাম্মদের দাসী হয়ে যায়।

জিজিয়া (অমুসলিমদের কর):

    মুহাম্মদ এবং পরবর্তী খলিফারা অমুসলিমদের (বিশেষ করে ইহুদি ও খ্রিস্টানদের) উপর “জিজিয়া” কর চাপিয়ে দেন (সূরা তাওবা ৯:২৯)। এই কর না দিলে তাদের ইসলাম গ্রহণ করতে বাধ্য করা হতো অথবা যুদ্ধ করেই হত্যা করা হতো।

    এই কর কেবলমাত্র অমুসলিমদের উপর চাপানো হতো, যা এক ধরনের ধর্মীয় বৈষম্য ও নিপীড়নের নিদর্শন।

সমালোচনা:
মুহাম্মদের ধর্মপ্রচারের একটি বড় অংশ ছিল রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল ও শত্রু নিধনের মাধ্যমে ইসলামের বিস্তার। ধর্মীয় স্বাধীনতা নয়, বরং বিজিতদের উপর শর্তসাপেক্ষ সহনশীলতা ছিল বাস্তবতা। ইসলাম যদি সত্যিই “শান্তির ধর্ম” হতো, তবে অস্ত্র ও করের মাধ্যমে ধর্মপ্রচার হতো না।

 

 

৫. মুহাম্মদের বাল্যবিবাহ ও আয়েশার বয়স

ইসলামের নবী মুহাম্মদ যে ঘটনা নিয়ে সবচেয়ে বেশি সমালোচিত হন, তার একটি হল তাঁর আয়েশা নামে এক কিশোরীকে বিয়ে করা। এটি আধুনিক মানবাধিকার ও শিশু সুরক্ষার দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুতর বিতর্কের বিষয়।


হাদিস অনুসারে আয়েশার বয়স:

  • সহীহ বুখারিতে হাদিস রয়েছে (বুখারি ৫১৩৩, ৫১৫৮):

    “আয়েশা বলেন, আমি ছয় বছর বয়সে মুহাম্মদের সাথে বিয়ে হই এবং নয় বছর বয়সে তাঁর সঙ্গে সহবাস করি।”

  • এটি সহীহ মুসলিম সহ অনেক হাদিস গ্রন্থে বারবার এসেছে, এবং মুসলিম স্কলারদের বিশাল একটি অংশ একে অস্বীকার করে না।


সমালোচনা ও বিতর্ক:

  • আজকের দুনিয়ায় নয় বছরের শিশুকে বিবাহ ও সহবাস করা হলে সেটিকে শিশু ধর্ষণ ও নির্যাতন হিসেবে গণ্য করা হয়।

  • ইসলামপন্থীরা প্রায়ই বলেন: “তখনকার যুগে এটা স্বাভাবিক ছিল।”
    কিন্তু প্রশ্ন হলো—নবী কি নৈতিকতার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ হবেন, নাকি সময়ের প্রথা অনুযায়ী চলবেন?

  • নবীর কাজ যদি "নেতৃত্ব" দেখানো হয়, তাহলে কেন তিনি এক শিশুকন্যাকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করলেন?


অন্য এক দৃষ্টিভঙ্গি:

  • মুহাম্মদের অন্যান্য স্ত্রীরা বিধবা ছিলেন—তবে আয়েশা ছিলেন একমাত্র কুমারী ও অপ্রাপ্তবয়স্ক স্ত্রী।

    এটি প্রমাণ করে যে মুহাম্মদের মধ্যে ব্যক্তিগত আকর্ষণ বা যৌন চাহিদার একটি ব্যতিক্রমী দিক ছিল, যা শিশুদের প্রতিও প্রসারিত হয়েছিল।


বিজ্ঞান ও শিশু মানসিকতা অনুযায়ী:

  • আধুনিক শিশু মনোবিজ্ঞান বলে, ৯ বছর বয়সে একটি মেয়ে মানসিকভাবে বৈবাহিক সম্পর্কের জন্য প্রস্তুত নয়। এতে তার মানসিক ও শারীরিক বিকাশে গভীর ক্ষতি হয়।


উপসংহার:
এই ঘটনা প্রমাণ করে মুহাম্মদ ছিলেন তাঁর সময়ের মতোই একজন মানুষ—তিনি আদর্শ, পূজনীয়, সর্বশ্রেষ্ঠ নন। তাঁর কর্ম আজকের সভ্যতা অনুযায়ী বিচার করলে তা অগ্রহণযোগ্য ও অমানবিক।

Post a Comment

Previous Post Next Post